স্বজনরা বানিয়েছে ভারসাম্যহীন, পুলিশি সহায়তায় পরিবারে ঠাঁই পেল রুহুল!
মোঃ আব্দুল কাইয়ুম॥ চল্লিশ বছর বয়সী যুবক রুহুল মিয়াকে প্রায়ই দেখা যেত মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা এলাকার আশপাশে ঘুরে বেড়াতে। থানা পুলিশ কিংবা আশপাশের লোকজনসহ সবাই তাকে পাগল বলেই মনে করতো। থানার সামনে তাকে নিয়মিত দেখে রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুলের খোঁজ খবর নিতে নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। সে অনুযায়ী মানসিক ভারসাম্যহীন রুহুলের বাড়িঘর, আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর নেয়ার দায়িত্ব পান ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর উদ্দিন।
দ্বায়িত্ব পেয়ে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এসআই নুর উদ্দিন রাজনগর উপজেলার সদর ৫নং ইউনিয়নের মশুরিয়া গ্রামে খোঁজ নিয়ে সেই রুহুল মিয়ার আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। জানা যায়, রুহুলের মা মারা যাওয়ার পর বাবা আরব আলী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই থেকে সৎ মা রুহুলকে মানসিক অত্যাচার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতে রুহুল দীর্ঘদিন তাঁর মামা বাড়ীতে অবস্থান করলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান।
পুলিশ জানিয়েছে মঙ্গলবার ২০ ডিসেম্বর রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মশুরিয়া গ্রামে রুহুলের এলাকার লোকজনদের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করে ভারসাম্যহীন রুহুলকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রুহুলের স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, রুহুলের এই পরিস্থিতির পেছনে মূল কারণ সম্পত্তি এবং সৎ মা। রুহুলের আপনজনেরাই সম্পত্তির ভাগ ভাটোয়ারা সংক্রান্ত বিষয়ে রুহুলকে কৌশলে পাগল সাজিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তবে এর পিছনে মূল ভুমিকা সৎ মায়ের।
এদিকে খোঁজ পাওয়া রুহুলকে পরবর্তীতে রাজনগর থানা পুলিশের সহায়তায় এলাকার লোকজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সামনে রুহুলকে তার পরিবার গ্রহণ করে এবং রুহুলের যথাযথ চিকিৎসা করাবে মর্মে পুলিশকে আশ্বস্ত করেন। রাজনগর থানায় অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভ’ষণ রায় জানান, ‘রুহুল নামের এই লোক প্রায় সারাদিনই থানার আশেপাশে থাকতো। দেখে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হত আমার। পুলিশের কাজই হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা। আর আমার থানার সামনেই একটা মানসিক ভারসাম্যহীন লোক অসহায়ের মত পড়ে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সাথে আলোচনা করে এসআই নুর উদ্দিনকে দায়িত্ব দেই তার পরিবার খুঁজে বের করার জন্য। আমরা রুহুলকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। তার পরিবারকে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে যে কোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ তাঁর পাশে থাকবে।’
রাজনগর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) নুর উদ্দিন জানান,প্রায় ৬ মাস আগে থেকে রুহুলকে রাজনগর থানা এলাকার আশপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখে নজরে আসে আমাদের। তবে তাঁর পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায় তার সাথে থাকা একটি জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে। সেই থেকে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল তার পরিচয় নিশ্চিতে। আমরা মানবিক দিক বিবেচনায় রুহুলকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।
মন্তব্য করুন