স্বপ্ন পুরন হলো না আবু সুফিয়ানের পরিবারে চলছে শোকের মাতম
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ এমনটি কেউ ভাবতে পারেননি। সকালে হাসি খুশিতে মনে মায়ের কাছ হতে বিদায় নিয়ে বাবা, চাচা,ভাইসহ গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে ঢাকার মহাখালি এলাকায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে রওয়ান দেন। কিন্তু কি নিমর্ম পরিহাস বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে। সঙ্গে ফিরলেন আরো ৭জনকে সঙ্গে নিয়ে মৃত অবস্থায়। মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিক্ষিত উপাজর্নক্ষম আবু সুফিয়ান এলাকায় অতি পরিচিতজন। তিনি ইসলামী সংঘটন ছাত্র জমিয়ত কেন্দ্রীয় কমিটি তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
গ্রামে ৮ জনের মৃত্যুর খবরে রুপসপুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া, কান্নার রোল উঠেছে পরিবারসহ গোটা এলাকায়। ৫টি পরিবার এখন অন্ধকার। একসাথে ৮টি কবর তৈরী করতে হবে এমন টি কেউ কোন দিন ভাবেননি বলে জানান গ্রামের নাছির মিয়া। শনিবারও পরিবারের স্বজনরা হাউমাউ করে কাঁদছেন। সমবেদনা জানাতে আসা স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিহতদের স্বজনদের কান্নায় চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। কেন এমন হলো। এখন কি ভাবে বাচবেন তা উচ্চস্বরে আওয়াজ করে বলছেন। তাদের কান্না দেখে অনেকেই কাদঁছেন। এ যেন এক মৃত্যুপুরী গ্রাম। গ্রামের আরেক নিহত মুরব্বী মাওলানা সাইদুর রহমান। তিনি সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি’র বাবার নামে প্রতিষ্টিত মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আরেক নিহত মুরব্বী হলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হাজী আব্দুল হান্নান। তার পরিবারে র সবাই বাকরুদ্দ। বর আবু সুফিয়ানের চাচা মতিউর রহমান ওরফে মুর্শেদ আলী ভাল মানুষ ছিলেন। তার ছোট ছেলে আলী হোসেন স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। এমন মানুষগুলোকে গ্রামবাসী আর দেখতে পারবেন না। কি কষ্ট হচ্ছে মানূষগুলোকে হারিয়ে তা সরেজমিনে গ্রামে গেলে প্রমান মিলে। গ্রামবাসী নিহতের পরিবারগুলোকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছেন না। আহতদের পরিবারও উদ্বিগ্ন। তাদের প্রশ্ন তারা কি ভাল হবে। তাদের পরিজনরা কাঁদছেন।
মানুষ মরনশীল। পৃথিবীতে জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হয় কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। তেমনি শুক্রবার এক সড়ক দুর্ঘটনায় বিয়ের বর সহ ৮ব্যক্তির মৃত্যু মনটাকে ব্যথিত করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন রুপসপুর গ্রামের বাসিন্দা ফ্রান্স প্রবাসী ফজির আলী নাদিম। তিনি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রূপসপুর গ্রামের নিহত আদিউর রহমান সরফর এর ছেলে মাও: আবু সুফিয়ান। অত্যন্ত ন¤্র-ভদ্র আলেমে দ্বীন মাওঃ আবু সুফিয়ান বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচন করেন ব্রাম্মনবাড়িয়ার বিজয়নগরের মাওঃ আবু হানিফা’র মেয়ে মাহমুদা ইয়াসমীন’কে। তারা ঢাকার মহাখালিতে থাকে।
১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ছিল মাওঃ আবু সুফিয়ানের শুভ বিবাহ। জীবন সাথীকে বরণ করতে ভোর বেলায় একটি মাক্রোবাসে ১১জন যাত্রী সহ রওয়ানা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। সাথে যাত্রী হিসেবে ছিলেন তাঁর পিতা আদিউর রহমান সরফর, ছোট ভাই কামরান আহমদ, চাচা মতিউর রহমান মুর্শিদ, চাচাতো ভাই (১২বছরের শিশু) আলী হোসেন, মামা দুরূদ মিয়া, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি হাজী আব্দুল হান্নান, আতœীয় সাইদুর রহমান সোহাগ, মুকিত চৌধুরী মুক্তার, জাকির হোসেন। কিন্তু এদের কেউ কি জানতেন রবসহ লাশ হয়ে যে ফিরতে হবে তাদেরকে?
.বুক ভরা আশা আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে তাদের গাড়ি যখন ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার শশই ইসলামপুর এলাকায় পৌছে তখন এনা পরিবহনের একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে বর মাওঃ আবু সুফিয়ান সহ ৮জন নিহত হন। যাত্রীদের মধ্যে বরের ভাই ও গাড়ি চালক বেঁচে থকলেও অবস্থা আশংকা জনক।
শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর রুপশপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ান (২৬) বিয়ে করে বউকে ঘরে তুলে মায়ের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে সিলেট যাবার কথা ছিল তার। তার আগেই শুক্রবার সকাল দশটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শশই গ্রাম এলাকায় যাত্রীবাহী বাস এনা পরিবহনের আঘাতে বরের মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুছড়ে যায়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই বর, ভাই বাবাসহ সাতজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরেক বরযাত্রীর মৃত্যু হয়। ফলে আবু সুফিয়ানের আর বিয়ে করে বউ ঘরে তোলা হয়নি ও মাকে নিয়ে ডাক্তারও দেখানো হল না। রুপসপুর গ্রাম এখন শুধুই নিস্তব্ধ একটি গ্রাম। একই পরিবারভুক্ত চারজনসহ আটজনের মৃত্যুতে গ্রামবাসী যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, হাসি খুশিতে ভরপুর রুপসপুর গ্রাম একটি দুর্ঘটনায় হাঁসির বদলে কান্নায় ভরে গেছে। রুপসপুর গ্রামে হাজারো জনতা ভিড় করছে।
মন্তব্য করুন