হাকালুকিতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিলুপ্তপ্রায় রানী মাছ
কুলাউড়া অফিস॥ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে ফিরছে বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেইসাথে মাছের উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এমতাবস্থায় হাকালুকি হাওরের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি স্থানীয় লোকজনের।
পরিবেশ অধিদফতরের মতে, হাকালুকি হাওরকে মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র বলা হয়ে থাকে। এই হাওরে ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতি হুমকি বা বিলুপ্ত পথে। শুধু মাছ নয় হাকালুকি হাওর ভরাট, হাওর থেকে নির্বিচারে মাছ ও জলজ উদ্ভিদ আহরণের কারণে হাওরটির জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়ে। হাওরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অভয়াশ্রমের জন্য ১০টি বিল খনন করা হয়। বিলগুলো হচ্ছে আগদার বিল, মাইছলার ডাক বিল, কইয়ার কোনা বিল, কন্টিনালার কর খাল, মইয়াজুরি বিল, রনচি বিল, তেকোনি বিলের দুটি অংশ, বিড়ালি খাল ও কুরিয়া বিল। বর্ষা মৌসুমে অভয়াশ্রমে ঝাড়-কাঁটা, হিজল-করচের ডাল ও বাঁশ ফেলা হয়।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় হাকালুকি হাওরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১০ সালে ১২ টি বিলকে অভয়াশ্রম করার পর হাকালুকি হাওরে মাছে উৎপাদন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। চলতি বর্ষা মৌসুমে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রচুর পরিমান মাছ ধরা পড়েছে জেলেদের জালে। বিশেস করে বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় থাকা রানী মাছ ধরা পড়ছে। এছাড়াও কালিবাউস, চিতল, গজার মাছ, পাব্দা প্রভৃতি মাছও উঠছে জালে।
মৎস্যজীবিসহ হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দারা জানান, মাত্র ১২টি অভয়াশ্রম হওয়ায় হাওরে এখন মৎস্যজীবিদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে বর্ষা মৌসুমে। হাওরের ছোটবড় ২৩৮ বিল থেকে কমপক্ষে ৩৮টি বিলকে অভয়াশ্রম করার দাবি জানান। বর্ষা মৌসুমে রানী মাছ ১২শ টাকায় আর পাব্দা মাছ ৮শ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন জেলেরা।
হাকালুকি হাওর এলাকায় কর্মরত বসরকারি সংস্থা ক্রেলের সাইট কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, মূলত অভয়াশ্রমের কারণে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ নির্বিঘেœ তাদের প্রজনন করতে সক্ষম হচ্ছে। শুধু বিলুপ্ত প্রজাতিই নয়, হাওরে সবধরণের প্রচুর পরিমান মাছ ধরা পড়েছে। এটা নি:সন্দেহে বলা যায়, হাকালুকি হাওরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অযৌক্তিক নয়। যদি অভয়াশ্রমের সংখ্যা ও ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা হয় তাহলে হাকালুকি হাওরের উৎপাদিত মাছ দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিসার সুলতান মাহমুদ জানান, ২০১০ সাল থেকে হাকালুকির ২৩৮ বিলের মধ্যে ১২ টি বিলকে অভয়াশ্রম করার পর হাকালুকি হাওরে মাছে উৎপাদন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। তাছাড়া নতুন করে আরও ১০টি বিল খনন করা হয়েছে। হাকালুকিতে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে অভয়াশ্রমগুলোতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ও নিয়মিত তদারকির কারণে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যায়ক্রমে।
মন্তব্য করুন