হাকালুকির হাওরে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ
হারিস মোহাম্মদ॥ এশিয়ার বৃহত্তর হাকালুকি হাওরের কৃষকেরা বাদাম, সূর্যমুখী, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ নানা রকম সবজি চাষে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা ও সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জ এ পাঁচটি উপজেলা বেষ্টিত বৃহত্তম হাকালুকি হাওর। হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবার রবিশস্য আবাদ হয়েছে।
বর্ষাকালে ঢেউ আর বানের পানির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষেরা শুষ্ক মৌসুমে সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে বাদাম, সূর্যমুখী, সরিষা, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, ফরাস, টমেটো, করলা, কাঁচামরিচসহ নানান জাতের সবজির ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও উৎফুল্ল।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় দুই হাজার তিনশ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষিবিভাগ সূত্রে বেলে, দো-আঁশ ও এটেল মাটিতে তেল জাতীয় ফসল বাদাম, সূর্যমুখী ও সরিষার ফলন ভাল পাওয়া যায়। তাই এবার হাকালুকি হাওর বেষ্টিত উপজেলাগুলোতে তেল জাতীয় ফসল বেশী চাষ হয়েছে।
রবি মৌসুমের শুরুতে বপন করা সূর্যমুখী ও সরিষা এখন ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। হাকালুকির দিগন্ত জুড়ে যেন সূর্যমুখী ও সরিষার হাসি। মাঠের পর মাঠ জুড়েই হলুদ ও সবুজের সমারোহ। কৃষি বিভাগ উন্নত জাতের বীজ ও সার দিয়ে ফসল চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করায় এ জাতীয় ফসল চাষে দিনদিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
এছাড়া পলিযুক্ত মাটিতে মিষ্টি কুমড়া, ফরাস, তরমুজ, বেগুন, করলা, কাচামরিচসহ এ জাতীয়সবজির ফলন ভাল হয়েছে। বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
জুড়ী উপজেলার বেলাগাও গ্রামের কৃষক মোঃ আতিকুর রহমানের পুত্র আল আমিন আহমদ জানান, এ বছর দশ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় প্রায় ৩ থেকে ৪ মন সরিষা পেয়েছেন। সারা বছরের পরিবারের তেলের যোগান রেখে প্রতি মন ৪ হাজার টাকা দরে ২০ মন সরিষা বিক্রি করেছেন।
হাকালুকি হাওরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষাণ কৃষাণীরা সরিষা ও সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন । এদিকে ভুট্টা চাষিরাও বসে নেই।
ভুট্টা পরিপক্ক হওয়ায় তারাও এখন ভুট্টা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ক্ষেতের মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, করলা, ফরাসসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ আলমগীর মিয়া বলেন, আফতাব আমেনা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর অর্থায়নে এ বছর ২০০’শ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বিক্রয় মূল্য ১ কোটি টাকা হবে বলে আশা করছেন।
কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাননি। তারা যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আরো বেশি ফলন পাওয়া যেত। বিশ্ববাজারে কৃষি পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুট্টা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ভুট্টা আহরণ শুরু হয়েছে। ভুট্টা থেকে পোল্ট্রি এবং গরুর খাদ্য হিসেবে সাইলেস তৈরি করা হচ্ছে।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান খান বলেন, আমরা কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভাল মানের বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করছি এবং রোগ বালাই দমনে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন