অকাল বন্যায় বোরো ধান হারানো ও মাছে মড়ক হাকালুকি পারের কৃষক ও জেলে পরিবারে হাহাকার : নীরব দুর্ভিক্ষের অসনি সংকেত

April 21, 2017,

আবদুর রব॥ অকাল বন্যায় বোরো ফসল হারানো হাকালুকি হাওর পারের হাজার হাজার কৃষকের পরিবারের মাতম শেষ না হতেই তার সাথে যুক্ত হয়েছে মাছ ধরায় ও বিক্রীর ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারের হাহাকার। পাঁচদিন ধরে হাওরে মাছ শিকারে না যাওয়ায় এসব জেলে পরিবারের সদস্যরা অনেকটা না খাওয়ার মতোই জীবন যাপন করছে। হাওরপারে এ যেন নীরব দুর্ভিক্ষের অসনি সংকেত।
দেশের সর্ববৃহৎ মিটা পানির মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হাকালুকি হাওরের ওপর বড়লেখা উপজেলার বর্নি, তালিমপুর, সুজানগর ও দাসেরবাজার ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল) থেকে আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত হাওরের ভাসমান পানিতে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রী করেই চলে তাদের সংসার। কিন্তু এবার চৈত্র মাসেই দেখা দেয় অকাল বন্যা। ভারী বৃষ্ঠি আর পাহাড়ি ঢলে হাওরপারের হাজার হাজার কৃষকের অনেক স্বপ্নের বোরো ফসল আধ-পাকা অবস্থায় তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ধান গাছ পচে হাওরের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর এতে মারা যায় হাকালুকির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছ খেয়ে মারা যায় হাঁস। পচা ধান আর পচা মাছের দুর্গন্ধে পানি ও বাতাস দুষিত হয়ে পড়ে।
১৬ এপ্রিল থেকে পানি দুষণমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রশাসন হাওরের পানিতে চুন ছিটানো শুরু করে। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে এলাকায় চালানো হয় ব্যাপক প্রচারণা। হাওরের মাছ না খেতে গণসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাওরপারের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে গত বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন, মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ব্যাপক প্রচারণার কারণে হাটবাজার মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। পথে বসার উপক্রম হয়েছে মাছ ব্যবসায়ীদের।
২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাকালুকি হাওর পারের কানুনগো বাজারে গিয়ে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের হতাশাগ্রস্থ অবয়ব লক্ষ করা গেছে। গলগজা গ্রামের জেলে দিলীপ বিশ্বাস, সুখলাল বিশ্বাস, কলারতলী পারের জেলে আমিন আলী, আব্দুল মন্নান, মতছির আলী জানান, ৬-৭ দিন পূর্ব থেকে হাওরে মাছ মরতে শুরু করেছে। প্রশাসন মাইকিং করে মাছ ধরা বন্ধ করেছেন। নিষেধ অমান্য করে ২/৪ জন মাছ ধরে বাজারে নিয়ে গেলে কেউ এসব মাছ কিনছে না। এখন আর কেউ চুরি করেও মাছ ধরছে না। পাঁচদিন ধরে মাছ ধরতে না যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্নি ইউনিয়নের পাকশাইল গ্রামের রহমত আলী, ময়না মিয়া, রফিক উদ্দিন জানান, এমন দুর্যোগ তারা ৪০-৫০ বছরের মধ্যে দেখেননি। মাছ ধরে বিক্রী করেই চলে তাদের ৬-৮ সদস্যের পরিবার। গত কয়েকদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, ধান হারানোর সাথে মাছের মড়কে হাজার হাজার জেলে পরিবারের না খেয়ে মরার অবস্থা হয়েছে। এ যেন হাওরপারের নীরব দুর্ভিক্ষ। সরকারের প্রতি তিনি জেলেদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের দাবী জানান।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ জানান, পানি দুষণমুক্ত করতে হাওরে চুন ছিটানো কার্যক্রম এবং হাওরের মাছ না ধরা ও না খাওয়ার জন্য গণসচেতনামুলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপজেলায় ৩ হাজার তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথাবার্তা চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com