হাকালুকি হাওরের একটি অভয়াশ্রমকে উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রতিবেদন
বিশেষ প্রতিনিধি॥ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকির হাওরের একটি মৎস্য অভয়াশ্রমকে উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে উপজেলা ও জেলা জলমহাল কমিটি। সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ২০১০ ও ১১ সালে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৮টি বিলের মধ্যে ১২টি বিলকে পর্যায়ক্রমে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে ১১টি অভয়াশ্রম বেসকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।
মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছের অবস্থা দেখে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হাওর খেকো অসাধু চক্রের। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের সাথে যোগসাজশে ৪-৫ বছরের এসব অভয়াশ্রমকে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে ইজারা নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত একটি প্রভাবশালী চক্র।
১৪২৩-১৪২৭ বাংলা মেয়াদে ইজারা প্রাপ্তির জন্য ২০১০ সালে অভয়াশ্রম ঘোষিত ৩৯৫ দশমিক ৭৫ একর আয়তনের পলোভাঙা, মরাসুনাই ও চিকনউটি গ্রুপ বদ্ধ জলমহাল ও ২০১১ সালে অভয়াশ্রম ঘোষিত ৭৫ দশমিক ২০ একর আয়তনের কৈয়ারকোনা বিলকে উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। হাওর তীরের বড়লেখা উপজেলার ইসলামপুর যমুনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ও শ্রীরামপুর পিয়াং হাঁস মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি নামে দুটি সমিতি এই আবেদন করলেও এর নেপথ্য রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তা প্রেরণ করেন।
বড়লেখা উপজেলা জলমহাল কমিটির সভায় কৈয়ারকোনা বিলকে অভয়াশ্রম উল্লেখ করে তা উন্নয়ন প্রকল্পে ইজারা প্রদানের সুপারিশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পলোভাঙা মরাসোনাই জলমহালটি ভুমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অভয়াশ্রম ঘোষিত। তবে জলমহালটি অগভীর ও শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়। যা অভয়াশ্রম অনুপযোগী। জলমহালটি অভয়াশ্রম ঘোষিত হলেও অভয়াশ্রমের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে সভায় মতপ্রকাশ করা হয়। সার্বিক বিবেচনায় সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে জলমহালটি অভয়াশ্রম না রেখে ৬ বছর মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে যমুনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারা প্রদানের সুপারিশ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওই সভায় উপজেলা জলমহাল কমিটির উপদেষ্টা ও সরকার দলীয় হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
৪ এপ্রিল বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন জেলা জলমহাল কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে জেলা জলমহাল কমিটিও উপজেলার প্রতিবেদনকে অনুসরণ করেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
এদিকে পলোভাঙা, মরাসুনাই ও চিকনউটি গ্রুপ বদ্ধ জলমহাল অভয়াশ্রমের ব্যবস্থাপনায় বড়দল ও হাকালুকি জাগরণী ভিসিজি (ভিলেজ কনজার্ভেটিভ গ্রুপ)। তারা অভয়াশ্রমকে উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করার খবর জানতে পেরে উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত না করার জন্য জেলা জলমহাল কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কাছে ১৭ মে লিখিত আবেদন করেছে।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা জলমহাল কমিটির সভায় হুইপ উপস্থিত ছিলেন নিশ্চিত করে মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউছুফ জানান, এই জলমহাল লুটেপুটে খাচ্ছে গোলাপগঞ্জের রাংজিওল গ্রামের নজীব আলী ও বেলাল মেম্বার। দিনে কারেন্ট জাল দিয়ে আর রাতে বেড়জাল দিয়ে ওরা মাছ শিকার করে। উন্নয়ন প্রকল্পে গেলে সরকার রাজস্ব পাবে। তাই বিলটি উন্নয়ন প্রকল্পে দেয়ার জন্য তিনি প্রতিবেদন দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন