হাকালুকি হাওরের বুক জুড়ে সূর্যমুখীর হাসি
হারিস মোহাম্মদ॥ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের বুক জুড়ে সূর্যমুখীর হাসি। হাওরের বুকচিরে হলদে ফুলের সমাহার যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সাময়িক সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে মন চায়।
বিস্তীর্ণ সূর্যমুখী ফুলের হলদেভাব দৃশ্যটি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করে তোলে অনায়াসে, তাইতো প্রতিনিয়ত পর্যটকরা ভিড় করছে হলদে রানীর রাজ্যে। সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। সকাল গড়িয়ে বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে ঠিক তখনই হাকালুকির সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠে সূর্যমুখীর হাসিতে।
মৃদু রোদে দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যের মেলা বসেছে। পুরো হাকালুকি হাওরে যেন বইছে সূর্যমুখীর সু-বাতাস। সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা ভীড় করছে হাকালুকির হাওরে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের যত্নের ফসলি জমি। সূর্যমুখী ফুল মানুষকে শুধু আনন্দই দেয়না। মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল উৎপাদনের লক্ষে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে।
চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন এ চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।
হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক ও সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা হাকালুকি হাওরে এসেছি। হাকালুকি হাওর এলাকায় তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সরকারি সহায়তায় অল্প ব্যয়ে প্রচুর লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এশিয়ার এ বৃহত্তম হাওরে সূর্যমুখী চাষ হতে পারে অন্যতম সম্ভাবনাময়। সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা পর্যটক ফারুক আহমদ বলেন, হাওরের বুকে সূর্যমুখীর ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার এখানে আসতে খুবই কষ্ট হয়।
প্রথমবারের মতো হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখী চাষ করা তাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভাল হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব। সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি। সূর্যমুখী চাষীরা বলেন, সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা অনেক পর্যটক সূর্যমুখী ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রনোদনার আওতায় জুড়ীতে ২১০ জন কৃষক সুর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলা থেকে ২১০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত সূর্যমুখীর মধ্যে হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের আবাদ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট ২৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো। বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি।
সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি । জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষের চাহিদা বাড়ছে। দৈনন্দিন তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার পাশাপাশি জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষীকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ চাষে রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন