হাকালুকি হাওরে নিষিদ্ধ জালে অবাধে মাছ শিকার
স্টাফ রিপোর্টার : সর্ব বৃহৎ হাকালুকি হাওরে অবাধে বেড়জাল, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জালে প্রতিনিয়ত অবাধে মিঠা পানির মাছ শিকার চলছে। যার কারণে হুমকিতে রয়েছে হাকালুকি হাওরের মৎস্য সম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য।
মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার মধ্যে অবস্থিত এ হাওরে দুই যুগ আগেও ১১০ প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। যা এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়, চিতল, রানী মাছ, এলংসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। এ ছাড়া মাখনা, পদ্ম, সিঙরা, শাপলা, বনতুলসী, নলখাগড়া, হেলেঞ্চা, বন্ধুয়া, চাল্লিয়াসহ শতাধিক প্রজাতির জলজ উদ্ভিদও হারিয়ে যেতে বসেছে হাওরের সংকটাপন্ন প্রতিবেশের কারণে।
হাওরের প্রতিবেশ নিয়ে কার্যক্রম চালানো সংস্থার সূত্রে জানা যায়, বর্ষাকালে প্রতিদিন বেড়জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। দলবদ্ধভাবে জেলেরা বড় নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করেন বিভিন্ন বিলে। আগে বেড়জালের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড় হাজার ফুট ছিল আর ব্যাস বড় ছিল। এখন জেলেদের ব্যবহৃত জালের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৪ হাজার ফুট এবং ব্যাস ছোট। যার কারণে বড় মাছের সঙ্গে পোনা মাছও ধরা পড়ে এসব জালে। এতে চরম হুমকির মুখে রয়েছে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন।
অন্যদিকে, হাওর তীরের কুলাউড়ার সাদিপুর, জুড়ী অংশের শাহপুর, বেলাগাঁও গ্রামে ৩ হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের বসবাস। হাওর থেকে মাছ শিকার করে এসব মৎস্যজীবী জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষাকালে হাওরজুড়ে পানি থাকে চার- পাঁচ মাস। এ সময় জেলেরা বড় বেড়জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে হাওরের নাগুয়া, ফুটবিল, চকিয়া বিল, চাতলাবিল, কাংলি, গোবকুড়ি বিলসহ অর্ধশতাধিক বিল এলাকায় মাছ শিকার করেন।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম জানান, হাকালুকি হাওর বেড়জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা যার জন্য বর্তমানে হাওর প্রতিবেশ সংকটাপন্ন। নানা দূষণে হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে। বর্ষাকালে হাকালুকিতে নানাপ্রজাতির দেশি মাছের প্রজননকালেও অবাধে মাছ শিকার হয়। নিষিদ্ধ জালে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরা পড়ায় মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। হাওরের প্রতিবেশ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএসের প্রকল্প কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, জেলেরা যেসব বেড়জাল ব্যবহার করেন এসব জালের ছিদ্র খুব ছোট। এ ছাড়া কারেন্ট জাল, নেট জাল দিয়েও ধরা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ। ১৫ বছর আগেও হাওরে ২৫টিরও বেশি অভয়াশ্রম ছিল। বর্তমানে অভয়াশ্রমের সংখ্যা মাত্র ১১টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটিতে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। অবাধে বেড়জাল ব্যবহারে হাওরের জলজ উদ্ভিদও বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর হাকালুকি হাওরের আছুরিঘাট পয়েন্টসহ বিভিন্ন অংশে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বেড় জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তদারকি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযান পরিচালনার বিষয়ে কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হক জানান, হাকালুকির বিলে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মৎস্য আহরণের খবর পেয়ে রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আটক জাল পুড়ানো হয় এবং জেলেরা পালিয়ে যায়। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শাহ নেওয়াজ সিরাজী, কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবু মাসুদ ও কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন