হাকালুকি হাওরে মিশছে দূষিত পানি জুড়ী নদীতে ভাগাড়, দূষণ

March 2, 2022,

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ জুড়ী নদী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে এ নদীর বর্জ্য মিশ্রিত পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে মেশে। এছাড়া নদীর দুই তীরে রয়েছে দখলদারের অত্যাচার। দীর্ঘদিন ধরে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলায় নদী দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও মানুষের অসচেতনতা এর জন্য দায়ী। অবিলম্বে জুড়ী নদী দূষণমুক্ত করে হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার দাবি জানান তাঁরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর অংশ থেকে জুড়ী নদীর উৎপত্তি। নদীটি উপজেলার ফুলতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি উপজেলা সদরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে।
বাংলাদেশ অংশে এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিলোমিটার। দখল ও দূষণে খরস্রোতা নদীটি নাব্যতা হারিয়ে ‘মরা জুড়ী নদী’তে পরিণত হয়েছে। বছরখানেক আগে নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়, পাশাপাশি নদীর ৮ দশমিক ৭০০ কিলোমিটার পুনর্খনন করা হয়।
দেখা যায়, নদীটি মৃতপ্রায়। ভবানীগঞ্জ ও কামনীগঞ্জ বাজারের সংযোগ সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। বাজারের লোকজন নদীর তীরে মলত্যাগের জন্য খোলা শৌচাগার স্থাপন করেছেন। দুর্গন্ধে নদীর আশপাশেও অবস্থান করা যায় না।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, জুড়ী বাজারের বর্জ্য ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে নদীতে। নদীদূষণের পাশাপাশি বর্ষায় এসব বর্জ্য হাকালুকি হাওরে গিয়ে মেশে। এতে মাছসহ জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পরেছে। উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি জুড়ীসহ নদী ও হাওরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদী যেন দূষণমুক্ত করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান নোমান বলেন, বাজারের বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত স্থান না থাকায় তা নদীতে ফেলা হচ্ছে। বর্ষায় নদীর পানিতে এসব বর্জ্য হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। এতে হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কল্যাণ প্রসূন চম্পু বলেন, ‘উপজেলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন সম্ভব। উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’
জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, বর্জ্য ফেলার স্থান না থাকায় নদীতীরেই তা ফেলা হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রকল্পের মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার। এ জন্য উপজেলার চালবন্দর ও কাপনাপাহাড় এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি স্থান প্রাথমিকভাবে দেখা হয়।
মাছুম রেজা আরও বলেন, ‘বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। আমার ইউনিয়নের একটি অংশে কাপড়ের নেট দিয়ে রেখেছি, যাতে কেউ নদীর তীরে বর্জ্য ফেলতে না পারে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাব। বাজারের ব্যবসায় সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশও দিয়েছি। বর্জ্য ফেলার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা হবে।’
নির্দেশ অমান্য করে নদীতে বর্জ্য ফেললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি রাখা হবে। নদী, হাওর ও পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে বলেও জানান ইউএনও।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com