হায় হোসেন হায় হোসেন ধ্বনিতে প্রকম্পিত কুলাউড়ার নবাব বাড়ি
কুলাউড়া অফিস: হায় হোসেন হায় হোসেন ধ্বনিতে আর নিজ শরীর রক্তাত্ব করে কুলাউড়ার পৃথিমপাশার শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা পালন করলো ১০ মহরম পবিত্র আশুরা। ১২ অক্টোবর বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ আড়াইশ বছরেরও বেশী সময় ধরে পালন করে আসা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের নবাব বাড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে।
অপরদিকে ১০ মহরম বেলা সাড়ে ৩টায় পৃথিমপাশা নাবাব বাড়ির হোসেনি দালান থেকে ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে বের হয় সু-সজ্জিত তাজিয়া মিছিল। শিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পুরুষ যুদ্ধের নানা অনুসঙ্গ, তাজিয়া, কালো, লাল ও সবুজ নিশান উড়িয়ে মিছিলে অংশ নেয়। খালি পায়ে মিছিলে অশংগ্রহণ কারীরা শোকের প্রতিক কালো পোশাক পরিধান করে।
কারবালার নির্মম হত্যাকান্ড ও ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রাঃ) শাহাদৎ বরণের শোকে কাতর হয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা ধারালো ছোরাগুচ্ছ রশিতে বেধে নিজের শরীরেকে অবলীলায় রক্তাক্ত করে। ফলে বুক ও পিঠ থেকে ঝরছে রক্ত। কারো কারো কালো জামা রক্তে ভিজে চুপসে গেছে আর সাদা জামা হয়ে উঠে রক্তে লালে-লাল। তবুও ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস। তাজিয়া মিছিলে বুক চাপড়ে, জিঞ্জির দিয়ে শরীরে আঘাত করে প্রকাশ করা হয় মাতম।
১০ মহরম বেলা ৩টায় নাবাব বাড়ির হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলসহ ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা নিজের শরীর রক্তাক্ত করে মিছিলটি রবিরবাজার পদ্মাদিঘির পারের দিকে এগোতে থাকে। সেই মিছিলের সাথে যোগ দেয় তরফি সাহেব বাড়ির আলম মিছিল। উভয় মিছিল একত্রি হয়ে রবিরবাজার পদ্মদিঘির পারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মহরমের সেই বিষাদময় দিনে ইমাম হোসেনের করুন মৃত্যুর পতিবাদে হায় হোসের হায় হোসেন মাতম করে আবারও নিজের শরীর রক্তাক্ত করে কারবালার শোকে শোক পালন করা করেন।
এতে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত করা হয় পৃথিমপাশার নবাব বাড়ি। ৯ মহরম দিনের শুরুতে ২ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠা ঐতিহ্যবাহি নবাব বাড়িতে প্রসাশনের উধ্বতম কতৃর্পক্ষের নিদের্শে ১০ মহরম করা হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্পর্শকাতর জায়গায় মোতায়েন করা হয় একাদিক থানা পুলিশ, বিজিবি ও গ্রাম পুলিশ। সবরকমের অপতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো নবাব বাড়ি জোড়েই তৎপর থাকে র্যাব, ডিবি এবং সিআইডি।
মিছিলে অংশ নিয়ে ধারারো ছোরাগুচ্ছ দিয়ে নিজ মাথা রক্তাক্ত করেন মৌলভীবাজর-২ আসন থেকে তিন বারের নির্বাচিত সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য এবং উক্ত অনুষ্ঠানের মোতাওয়াল্লী অ্যাড. নওয়াব আলী আব্বাছ খান। কথা হয় উনার সাথে। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকি। সেই ১২ বছর ধরে ধারালো ফলক দিয়ে পিঠে আঘাত করে আসছি।
আপনার মাথায় বেস রক্ত ঝরছে, এটা অনেক কষ্টের কাজ না! জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘যিনি ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার জন্য রক্ত ঝরানো কোনো কষ্টের কাজ না। প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেই ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম করতে থাকেন তিনি। ধারারো ছোরাগুচ্ছের আঘাতের ফলে মাথার বিভিন্ন অংশ কেটে রক্ত বের হচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রক্ষেপ নেই।
অপরদিকে ১ মহরম থেকে ১০ মহরম পর্যন্ত নবাব বাড়িতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল জিগির আজগার, কোরআনে তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, কাঙ্গালী ভোজসহ নফল নামায ও রোজা।
কথিত আছে প্রায় ১ হাজার ৩৩২ বছর আগে আরবি মহরম মাসের ১০ তারিখ মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ)এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) এবং তার ৭২ অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। সে দিন থেকেই দিনটি অত্যন্ত তাৎপযর্ম শোকাবহ, হৃদয়বিদারক হয়ে উঠে মুসলিম উম্মার জন্য এবং সত্য ন্যায় ও ইসলামের আদর্শকে উর্ধ্বে তুলে ধরার দিন ১০ মহরম। এ দিনের শোক স্মৃতিকে স্মরণ করে নারা বিশে^ও মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র আশুরা হিসাবে পালন কওে আসছে।
এদিকে শান্তি পূর্ণূভাবে আশুরা পালিত হওয়ায় নবাব বাড়ির পক্ষ থেকে প্রসাশনের সবাই ও সর্বস্তরের জনসাধারনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উক্ত অনুষ্ঠানের মোতাওয়াল্লী সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাছ খাঁন।
মন্তব্য করুন