হিমু এবং হিমু
হিমু আহমেদ॥
হেডস্যারের মুখোমুখি
হেডস্যার বললেন, ‘আগামীকাল স্কুল পরিদর্শক আসবেন। কাজেই সবাইকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। হোমওয়ার্কগুলো মনোযোগ সহকারে দেখে আসবে। স্কুল ড্রেস ছাড়া আসা যাবে না। স্কুলড্রেসও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। মনে থাকবে?’
আমরা সমস্বরে বললাম, ‘মনে থাকবে স্যার।’
‘বাবারা দেখো, কেউ কোনরকম উল্টোপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করো না। আমাদের স্কুলের একটা সুনাম আছে। যদি পরিদর্শক মহোদয় এসে খুশি হয়ে যান, তবে অবশ্যই স্কুলের জন্য ভালো একটা মঞ্জুরি পাওয়া যাবে। কি, তোমরা স্কুলের উন্নতি চাও না?’
আমরা আবারো সমস্বরে উত্তর দিলাম, ‘অবশ্যই চাই স্যার।’
‘ক্লাসের ফার্স্ট বয়, সেকেন্ড বয়, দাঁড়াও দেখি।’ হেডস্যার বললেন। সাথে সাথে ক্লাসের ফার্স্ট বয় এবং সেকেন্ড বয় দাঁড়িয়ে গেল।
হেডস্যার তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘শোনো, কালকে তোমাদের দুজনের উপর দায়িত্ব থাকবে কøাসের সুনাম রক্ষা করার। তোমরা ভালো ড্রেস পরে আসবে। পড়াটাও একটু ভালো করে দেখে আসবে, যাতে ঝটপট উত্তর দিতে পারো। ঠিক আছে?’
ফার্স্ট বয় এবং সেকেন্ড বয় দুজনই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। হেডস্যার তখন তাদেরকে ‘বসো’ বলে বেরিয়ে গেলেন।
আমি এবং হিমু হেডস্যার বেরিয়ে যাবার সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেলাম। হিমু দৌড়ে টেবিল থেকে চক তুলে নিল। হেডস্যার ভুলে ফেলে গেছেন। সে চক হাতে অবিকল হেডস্যারের মত ঘুরে দাঁড়ালো। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে, এমন সময় হেডস্যার আবার এসে ক্লাসে প্রবেশ করলেন। হিমু বরফের মত জমে গেল। আমি ঝট করে বসে পড়লাম। হেডস্যার ভ্রু কুঞ্চিত করে হিমুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি? এখানে কি করছো?’
হিমু নিরীহ গোবেচারার মত মুখ বানিয়ে বলল, ‘স্যার, আপনার চক ফেলে গেছেন।’
হেডস্যার বললেন, ‘ঠিক আছে দাও। আর শোনো, কাল তোমার স্কুলে আসার দরকার নেই।’
‘কেনো স্যার?’ প্রায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানতে চাইল হিমু।
‘তুমি কি থেকে কি করবে, আর স্কুলের সুনাম বিনষ্ট হবে। তার চেয়ে বরং কালকে তোমাকে ছুটি দিয়ে দিলাম।’
হিমু মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ‘স্যার, আমাকে মাফ করে দিন। আমি এখন থেকে ভালো হয়ে যাবার চেষ্টা করছি। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আপনি যা বলবেন, আমি তাই করবো। আগামীকাল আমি অবশ্যই আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে স্কুলে আসব।’
হেডস্যার বললেন, ‘ভালো হয়ে যাবার চেষ্টা করছো জেনে খুশি হলাম। ঠিক আছে, তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম। কালকে এসো স্কুলে, তবে আশা করবো কোন ধরণের অঘটন ঘটাবার চেষ্টা করবে না।’
‘আপনার কথা মনে থাকবে স্যার। আমি কথা দিচ্ছি, স্কুলের সুনাম বিনষ্ট হোক এমন কোন কাজ অবশ্যই আমি করবো না।’ দৃঢ়কণ্ঠে উত্তর দিল হিমু।
‘ঠিক আছে, বসো।’ এই বলে হেডস্যার বেরিয়ে গেলেন।
আমি দরজার পাশে উঁকি দিয়ে দেখলাম এবারে সত্যি সত্যি হেডস্যার চলে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে হিমুর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললাম, ‘মারহাবা, দোস্ত। দারুণ অভিনয় করেছিস। ওরে বাপরে, হেডস্যারকে পর্যন্ত বিভ্রান্ত করে ফেলেছিস। যাকগে, কালকে কি পরিকল্পনা আঁটছিস?’
হিমু চোখ টিপে বলল, ‘কালকের পরিকল্পনা হলো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ভদ্র ছেলের মত স্কুলে আসা এবং ঝটপট প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়া।
‘বলিস কি!’ অবাক হবার পালা আমার।
‘ঠিকই বলছি দোস্ত!’ গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিল হিমু।
[হিমু আহমেদ, শিশু সাহিত্যিক]
মন্তব্য করুন