হিমু এবং হিমু-২
হিমু আহমেদ॥
চোরের বিপদ
স্কুলে যেতে দেরি হয়ে গেল। ঘুম ভেঙ্গেছিল বেশ ভোরেই। ফুরফুরে মেজাজ। ভাবলাম এত তাড়াতাড়ি যখন ঘুমটা ভেঙ্গেছে, ফিশারিতে চলে যাই। চুপি চুপি মাছ ধরা যাবে। নিঃসন্দেহে চৌকিদার বেটা এখনও নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছিপটা হাতে নিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়লাম ফিশারির উদ্দেশ্যে। আমার বাসা থেকে বেশি দূরে নয় ফিশারীটি। ইদানীং খুব কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। আসল মাছচোরদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ ফিশারি কর্তৃপক্ষ। সেজন্য আমার মত সখের চোররা এখন একটু বেকায়দায় পড়েছে।
ফিশারিটা বেশ বড়। পাড়ে কিছু ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। সেগুলোর কোন কোনটি ঝোপের মত আকৃতি ধারণ করেছে। এরকম একটি ঝোপের আড়ালে খুব সাবধানে বসে পড়লাম। আসার সময় বাড়ির পাশের একটি কলাগাছের নিচের মাটি খুঁড়ে অনেকগুলো কেঁচো নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করলাম।
টোপ হিসেবে কেঁচোর কোন তুলনা নেই। বড়শিতে খুব সুন্দর এবং শক্তভাবে গেঁথে যায় কেঁচো। ফলে সহজে মাছগুলো টোপ খেয়ে ফেলতে পারে না। শুধু তাই নয়, জ্যান্ত কেঁচো মাছকে আকৃষ্ট করার কাজে অতুলনীয়!
অনেকক্ষণ বসে থেকে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই চারদিকে লক্ষ রেখে খুব সতর্কতার সাথে মাছ ধরতে হচ্ছে। তার উপর একটি কিংবা একাধিক মহা ধূরন্ধর মাছ বারবার কেঁচোর মত টোপও গিলে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে। দুই-তিনবার একটুর জন্য ফসকে গেল মাছ।
অনেকক্ষণ যাবৎ বড়শিতে টান পড়ছিল না। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গেছি। নাহ, আজ বোধহয় আমার কপালে মাছ নেই। বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে যখন উঠে যাবো ভাবছি, তখনই ঘটল ঘটনাটা। জোরালোভাবে ছিপে টান লেগেছে। মনটা খুশিতে নেচে উঠল। সম্ভবত বড় কোন মাছ হবে। যাক আল্লাহ বোধহয় মুখ তুলে চেয়েছেন। একটি বড় মাছ হলেই যথেষ্ট।
ছিপটা ধরতে যাব, প্রচন্ড চমকে উঠলাম। কার যেন পদশব্দ শোনা গেলো। খুব সাবধানে ঝোপের আড়াল থেকে তাকিয়ে পিলে চমকে উঠল। চৌকিদার আসছে। ইয়া তাগড়া জোয়ান। ধরতে পারলে কিলিয়েই আধমরা করে ফেলবে। এর চেয়ে বড় কথা হল, মহা কেলেংকারি হয়ে যাবে। তাই সাধের বড়শিটা ফেলে তাড়াতাড়ি গেরিলাদের মত মাটি ঘেঁষে আরেকটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। ইতোমধ্যে চৌকিদার পুকুরের পাড়ে চলে এসেছে।
আমার ছিপটা যেখানে পড়েছিল, তার থেকে সামান্য একটু দূরে এসে চৌকিদার দাঁড়ালো। ভাগ্য ভালো এখনও ছিপটা তার নজরে পড়েনি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল চৌকিদার। অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে চারদিকে তাকালো। সবকিছুই স্বাভাবিক আছে দেখে চলে যাবার জন্য যেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল চৌকিদার, তখনই ঘটে গেল অঘটনটা! সম্ভবত একটি বড় মাছ বড়শিতে আটকা পড়ে ছিপে জোরে টান দিল। বন্ধনহীন ছিপটা বড় একটা লাফ দিয়ে পুকুরের পানিতে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ এ কান্ডে চৌকিদার চমকে উঠলেও দ্রুতগতিতে নিজেকে সামলে নিল। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় লাফিয়ে উঠে পা দিয়ে ছিপটার শেষাংশ চেপে ধরল। আর এক সেকেন্ড সময় পেলেই ছিপটা ছিটকে পানিতে পড়ে যেত।
ছিপটা তুলতে চৌকিদারকে বেশ বেগ পেতে হল। অনেক কসরত করে ছিপটাকে খেলিয়ে খেলিয়ে সে বেশ দক্ষতার সাথে মাছটা তুলেই ফেলল। দেখা গেল বড়শিতে একটি বিরাট রুইমাছ ধরা পড়েছে। মনে মনে খুব আফসোস হল। রাগও হল। ইস্, এ বড় মাছটি তো আমারই প্রাপ্য ছিল। ভাগ্যটাই খারাপ। আর এক মিনিট সময় পেলেই এ অঘটনটা ঘটত না!
(বাকী অংশ আগামী পর্বে)
[হিমু আহমেদ, শিশু সাহিত্যিক]
মন্তব্য করুন