হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি মাসিক মজুরির সমপরিমান ঈদ বোনাস প্রদানের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার॥ আসন্ন ঈদুল আযহায় মাসিক মজুরির সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান, ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, পরিচয়পত্র-নিয়োগপত্র প্রদানসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন এবং বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ বাঁচার মত মজুরি প্রদানের দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
১০ জুন সকাল ১১ টায় জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রমদপ্তরের উপপরিচালক ও উপমহাপরিদর্শক এবং হোটেল-রেস্তোরা মালিক সমিতি বরাবর পেশ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা আসন্ন। এই ধর্মীয় উৎসব মুসলিম সম্প্রদায়ের জনগণের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসলেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের সব সময় এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়। কারণ ঈদুল আযহায় হোটেল শ্রমিকরা ন্যায্য উৎসব বোনাস প্রদান করা হয় না। এমন কি অধিকাংশ হোটেল শ্রমিকদের ঈদ উপলক্ষে ছুটি দেওয়া হলেও ছুটিকালীন সময়ের মজুরি দেওয়া হয় না। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে সৃষ্ঠ মুনাফায় মালিকপক্ষ মহাধুমধামে ঈদ উৎসব উদযাপন করেন। বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত)এর ধারা ২ (২ ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি-২০১৫ এর বিধি-১১১ (৫) অনুযায়ী সকল শ্রমিককে উৎসব বোনান প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও শ্রমিকদের উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত করা অমানবিক। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা দিয়ে বর্তমান ঊর্দ্ধগতির বাজারদরে পরিবার-পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক ১০ দিনও চলতে পারে না। চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পাশাপাশি বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে জনজীবন দিশেহারা। তদোপুরি হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের শ্রমআইনের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২ (১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ১ মাসের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থ্যতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ হোটেল মালিকপক্ষ সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নির্বিকার। শ্রমআইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হই। আমরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হই। যার কারণে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহায় মজুরির সমপরিমান উৎসব বোনাস ও মজুরিসহ ছুটি প্রদান, হোটেল সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন করার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
মন্তব্য করুন