হোয়াটস অ্যাপে গ্রুপ খুলে মানবসেবা করছেন তরুণেরা
রাজনগর সংবাদদাতা॥ টাকার অভাবে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না কন্যাদায়গ্রস্থ পরিবার, অসহায় ও অস্বচ্ছল ব্যাক্তির চিকিৎসা আটকে আছে অর্থের অভাবে কিংবা গরীব অথচ মেধাবী শির্ক্ষাথীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে এমন খবর শুনেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন একদল তরুণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে খুব কম সময়ে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় এসব মানুষের হাতে। নিজের জন্মস্থান ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বছরের ২রা এপ্রিল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ‘হৃদয়ে রজনগর’ নামে একটি গ্রুপ খুলেন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের তুলাপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী তরুণ জুনেদ আহমদ শিপু। এরপর যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রাজনগর উপজেলার পরিচিত সব প্রবাসীদের গ্রুপে যুক্ত করেন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপের এই গ্রুপেই সদস্যদের সাথে ‘হৃদয়ে রাজনগর’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কন্যাদায়গ্রস্ত, অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্যে কাজ করবেন বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। অস্বচ্ছল পরিবার শনাক্ত করতে ও অনুদান পৌঁছে দিতে ৮টি ইউনিয়নেই সেচ্ছাসেবায় আগ্রহী বেশ কয়েকজন যুবককে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। ওই বছরের ১৫ আগষ্ট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ভেড়ীগাঁও গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সকলকে অনুরোধ করে বার্তা পাঠান। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী ও প্রবাসী। ২০ আগষ্ট মেয়ের বিয়েতে খরচের জন্য ৩০ হাজার টাকা অনুদান তুলে দেন মৃত খলিল মিয়ার স্ত্রীর হাতে। এভাবেই তাদের পথচলা শুরু। এভাবেই একই এলাকার অস্বচ্ছল দুদু মিয়ার ছেলে শিমুলের চিকিৎসায়, গোবিন্দপুর গ্রামের রজব আলীর মেয়ের বিয়ে, কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের মেয়ের বিয়ে, একই গ্রামের মৃত ইয়াছিন উল্ল্যার মেয়ের বিয়েতে, কালাইকোনা গ্রামের মৃত আলম মিয়ার মেয়ের চিকিৎসা, টেংরা ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের রাজু রবিদাশের চিকিৎসা, উত্তরভাগ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের তজই মিয়ার মেয়ের বিয়ে, সদর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের মুক্তার মিয়ার চিকিৎসায় ও মুশরিয়া গ্রামের মৃত মালিক মিয়ার মেয়ের বিয়ের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় দুই লক্ষ টাকা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সংগ্রহ করে প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশে ফিরে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জুনেদ আহমদ শিপু তাদের গ্রুপের কার্যক্রম তুলে ধরে সহযোগিতা চান রাজনগর উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের কাছে।
গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জুনেদ আহমদ শিপু বলেন, আমরা ৩টি লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কন্যাদায়গ্রস্ত, অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত ও গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রুপের সদস্যরা সেচ্ছায় প্রায় দুই লাখ টাকা অনুদান দেন। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মাঝে আনন্দ রয়েছে। ইচ্ছাশক্তি থাকলে প্রবাসে বসেও কাজ করা সম্ভব। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ালে দেশ এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
মন্তব্য করুন