‘হ্যালো আমি জেল সুপার বলছি’ মৌলভীবাজার কারাগারের জেল সুপারের নামে হাজতির পরিবারকে প্রতারণার চেষ্টা : থানায় জিডি
আব্দুর রব॥ বড়লেখা থানার তথ্য প্রযুক্তি যোগাযোগ মামলায় মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বন্দী এক হাজতির পরিবারকে প্রতারণার চেষ্টা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রটি হাজতি ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় জানিয়ে অপারেশনের জন্য ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছিল। এব্যাপারে হাজতি বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনের ভাই থানায় জিডি করেছেন। তিনি উপজেলার ছরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সত্তারের ছেলে। জেল সুপার মৌলভীবাজারে প্রতারক চক্রের অপ তৎপরতার চেষ্টায় সকল বন্দীর পরিবারকে এব্যাপারে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জিডি সুত্রে জানা গেছে, ১২ আগস্ট একটি মামলায় বড়লেখা থানা পুলিশ দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনকে গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করে। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজের ফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি কল আসে। ফোনকলটি রিসিভ করার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় আব্দুল কুদ্দুস স্বপন জেল খানাতে স্টোক করেছেন। সংবাদটি তাহার ভাইয়ের কাছে পৌঁেছ দিতে অনুরোধ জানায়। ইউপি সদস্য আজিজ ফোনটি স্বপনের ভাই আব্দুল বাছিতের কাছে দেন। তখন অপর প্রান্তের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাছিতকে জানায় ‘আপনার ভাই ষ্ট্রোক করেছেন, জেল সুপারকে তাড়াতাড়ি ফোন করেন।’ তখন ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কথিত জেল সুপারের মোবাইল নম্বর দেন। আতংকিত স্বপনের ভাই তাৎক্ষণিক কথিত জেল সুপারের সাথে যোগাযোগ করলে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয় ‘হ্যালো আমি জেল সুপার বলছি।’ আপনার ভাই ষ্ট্রোক করেছেন, তাহাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অবস্থার অবণতি হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। উনার অবস্থা আশংকাজনক ডাক্তারের ফোন নম্বর দিচ্ছি, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। এই কথা বলে কথিত জেল সুপার কথিত ডাক্তারের ফোন নম্বর দেন। ডাক্তারের ফোনে তখন স্বপনের ভাই যোগাযোগ করলে ডাক্তার বলেন ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনার ভাইয়ের অপারেশন করতে হবে। না হলে বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। জেল সুপার সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা বহন করবেন। আপনাদের ৬০ হাজার টাকা বহন করতে হবে। আপাতত বিকাশ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা পাঠান। বাকী টাকা হাতে রেডি রাখেন বলে কথিত ডাক্তার একটি বিকাশ ফোন নম্বর দেন। ভাইয়ের অসুস্থতার কথায় আতংকিত আব্দুল কুদ্দুসের ভাই বড়লেখা বাজারে আসেন বিকাশ করতে। তখন এক আত্মীয় টাকা পাঠাতে বাধা দিয়ে বলেন আমি জেলারের সাথে কথা বলি। তিনি মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন হাজতি আব্দুল কুদ্দুছ স্বপন সুস্থ এবং কারাগারেই রয়েছেন। তখন আব্দুল কুদ্দুস স্বপনের ভাই এটা কোন প্রতারক চক্রের কাজ বুঝতে পেরে ওই রাতে বড়লেখা থানায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জিডি করেন (জিডি নং-৫১৩)। হাজতির ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘ফোন কলটি পেয়ে আমরা আতংকিত হয়ে পড়ি। পরিবারের সাবাই উদ্বগ্নি হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বুঝতে পারি এটি একটি প্রাতারক চক্রের কাজ।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সুপারিনটেনডেন্ট (সুপার) আনোয়ার”জ্জামান চৌধুরী সোমবার বিকেলে জানান, ‘ আমার পুর্ববর্তী কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গায় এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। এখন মনে হচ্ছে মৌলভীবাজারেও এ চক্রটি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করায় হাজতির পরিবার বড় ধরনের প্রতারণার হাত থেকে বেঁচে গেছে। এ ব্যাপারে হাজতিসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনির”জ্জামান প্রতারণার বিষয়ে জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংঘবদ্ধ এ প্রতারক চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
মন্তব্য করুন