১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীঃ ইয়া নবী সালাম আলাইকাঃ ইয়া রাসূল সালাম আলাইকা।
মুজিবুর রহমান মুজিব ॥ বারোই রবিউল আউয়াল রাসুলে খোদা, খাতিমুন্নবিয়্যীন, সাঈয়েদুল মুরছালীন, আদর্শ মানব-মহামানব-মহানবী-মোহাম্মদ মোস্তফা (স:)-র আবির্ভাব ও ওফাত দিবস। বারোই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী হিসাবে পালিত হবে সকল মুসলিম জাহানে উম্মতে মোহাম্মদী (স:)-জোড়া নফল রোজা, ওয়াজ, নসিহত, জিগির আজগার, এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে প্রিয় নবীকে শ্রদ্ধায়-ভালো বাসায় স্মরণ করবেন। আসমানী কিতাব আল কোরআনের বিধান এবং মহানবী (স:) প্রদর্শিত পথ ও মত অনুসরনের অঙ্গীকার ওয়াদা করবেন মুসলিম জাহান-উম্মতে মোহাম্মদী (স:)।
জাজিরাতুল আরব-প্রাক ইসলামিক এ্যারাবিয়া ছিল অন্ধকারের যুগ ডার্ক এইজ-আইয়্যামে জাহেলিয়াত। উষর মরুর ধূসর দেশে গোত্রে গোত্রে বংশানুক্রমে সংঘাত ও সংঘর্ষ লেগেই থাকত। সরকার-সমাজ-সভ্যতা-ছিল না। পবিত্র কাবা গৃহ ছিল দেব দেবীর মূর্তিতে পরিপূর্ণ। অন্ধকার যুগের আদম সন্তানগণ ছিলেন মূর্তি পূজারি। মদ্যপ্য। জোয়ারি। দাঙ্গাঁহাঙ্গাঁমা প্রিয়। কন্যা শিশু জন্ম হলে নির্মম ভাবে জবাই করা হত। জাজিরাতুল আরব এর অন্ধকার যুগে গোত্রে গোত্রে জনে জনে হানা হানি এমন পর্য্যায়ে গিয়েছিল যে সেখানে একজন নবীপ্রেরনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
আরবের এই অন্ধকার যুগে, উষর মরুর ধূসর দেশে পাঁচশত সত্তোর সালে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে পিতা আব্দুল্লাহর ঔরশে মা আমিনার কোল আলোকিত করে মরু ভাস্কর মহা মানব মহানবী মোহাম্মদ মোস্তফা (স:) এর এই ধরায় তশরীফ আনয়ন।
কবি বল্লেন-তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে। গায়ক গাইলেন- “মরুভূমে ফুলরে ফুল কি আচানক বেশে রে- কি আনচানক বেশে”।
মানব শিশু মোহাম্মদ (স:) আরবের প্রথানুযায়ী দুধ মাতা হালিমার কুলে বেড়ে উঠলেন। পিতৃ-মাতৃহীন এতিম-এছির বালক মোহাম্মদ মহান আল্লাহ তায়ালার অপার রহমত বরকত আর মক্কার মাটি ও মানুসের ছায়ায় মায়ায় বেড়ে উঠেন। ঝঞা বিক্ষুব্দ-বিভক্ত অশান্ত আরবীয় সমাজ ব্যবস্থায় সমাজ গঠনও সমাজ উন্নয়নে সামাজিক সংঘটন-হিলফুল ফুজুল গঠন করে সমাজ গঠন ও সমাজ সেবা মূলক কর্মকান্ডের জন্য “আল আমীন” উপাধি প্রাপ্ত হয়ে মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মাত্র চল্লিশ বৎসর বয়সে নবুওতি প্রাপ্ত হয়ে তেইশ বৎসর শেষে মাত্র তেষট্টি বৎসর বয়সে দায়িত্ব শেষে মহান মৃত্যোকে আলিঙ্গঁন করেন।
হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) একজন আদর্শ মানুষ, অতুলনীয় মানবিক গুনাবলির অধিকারী ছিলেন। আদর্শ মানুষ মোহাম্মদ (সঃ) এর তুলনা তিনি নিজেই। আল কোরআনের আলোকে মানব জাতিকে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পথ প্রদর্শন করে গেছেন। মহান আল্লাহ মনোনীত ধর্ম ইসলামকে আল্লাহর প্রেরিত নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সীমাহীন প্রতিকুলতার মাঝে ইসলাম ধর্মের প্রচারে ক্ষান্ত হন নি, নিরূপায় হয়ে প্রিয় জন্মভূমি, পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত পূন্যভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। অবশেষে যুদ্ধ বিগ্রহ শেষে মক্কা বিজয় শেষে বীরের বেশে সাহাবীগণকে নিয়ে বিজয়ী বীর হিসাবে জন্মভূমি মক্কা প্রবেশ করে মক্কাবাসিকে আপন করে নিয়েছেন। শাসক হিসাবেও মহামানব মোহাম্মদ মোস্তফা (স:) ছিলেন অতুলনীয়। অসাধারণ। অপূর্ব। মহানবীর মদিনা সনদ এবং বিদায় হজ্বের ভাষণ মানব জাতির জন্য দিক নির্দেশনা মূলক। কালামে পাক আল কোরআন নাযিল শেষে আল্লাহর রাসুল মদীনা মনোওয়ারাতে চীর শয়ানে
শায়িত হন। শাসক মোহাম্মদ (সঃ) শাসন কার্য্যে গণতন্ত্র, সাম্য, মৈত্রী, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্য বোধের মর্য্যাদা দিয়েছেন। মহানবীর মহা-প্রয়ানের পর তাঁর প্রিয় চার ছাহাবী-চার খলিফা ইসলামের ইতিহাসের খোলাফায়ে রাশেদীন রাস্ট্র পরিচালনায় স্বৈরতন্ত্র, একনায়ক বাদী শাসন নয় মজলিশ-ই-শুরার মাধ্যমে গণতান্ত্রীক মূল্যবোধের মর্য্যাদা দিয়েছেন- চর্চা করেছেন। পরামর্শ দাতা পরিষদ মজলিশে-শুরা-কে- আধুনিক জমানার ক্যেবিনেট মিনিষ্টার্স-এড ভাইজার্স-এর সঙ্গেঁ তুলনা করা যেতে পারে। যদি ও ব্যক্তি হিসাবে মজলিশ-ই-শুরার সদস্যদের রাজনৈতিক-ধর্মীয় অবস্থান আধুনিক কালের মিনিষ্ট্যার্স-এড ভাইজার্স-দের চাইতে অনেক উর্ধ্বে।
বর্তমানে গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রের পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং মিনিষ্টার্স-এডভাইজার্স-দের অবস্থান নিয়ে পর্য্যালোচনা, গবেষনা চলছে, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদীয় সংস্কৃতির চর্চানেই, বক্তিতন্ত্র ও কতৃত্ব বাদ প্রাধান্য পায়; অথছ দেড় হাজার পূর্বে যখন পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সংবিধান, সাংবিধানিক আইন কানুন ছিল না তখনই আল্লাহর রাসুল আরবে যে বিশাল ইসলামী সা¤্রাজ্য স্থাপনা করেছিলেন সেখানে সুশাসন, গণতান্ত্রীক মূলবোধ ও ন্যায় বিচার ছিল, দূর্নীতি ছিল না। আধুনিক বিশ্বে দূনীতি গ্রাস করছে, গণতন্ত্র, সুশাসন, রাষ্ট্র ও সমাজকে। বিশাল ইসলামী সা¤্রাজ্যের অধিপতি, দোজাহানের বাদসা মহামানব মোহাম্মদ এর ইন্তিকালের পর তাঁর পরিবার বর্গভরা পেটে খেতে পান নি। নিয়মিত ঘরে বাতি জ্বলে নি। মক্কা মদীনার শাসক এর সম্পদ হিসাবে পাওয়া গেল একটি খচ্ছর, এক খন্ড খঞ্জর, একখন্ড জমি, যা ইতিপূর্বেই ছদকা হিসাবে দান করে দেয়া হয়েছিল। অথছ আধুনিক জমানায় দাগ খতিয়ান চৌহদ্দাহীন তৃতীয়গ্রেডের পাতি নেতা, পিয়ন, দারোয়ানদের একাউন্টে ও দেখা যায় হাজার লক্ষ নয়, শত শত কোটি টাকা।
দেশও দুনিয়া ব্যাপী বর্তমানে চলছে অস্থিরতা ও অশান্তি। এই অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির বানী শুনা যেতে পারে, এই কঠিন সময় শেষে আমাদের প্রায়ান্ধকার ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তির সুবাতাস বইতে পারে মহামানব মোহাম্মদ মোস্তফা প্রদর্শিত পথ অনুস্মরণ করলে, তাঁর মত-মত বাদ মেন চল্লে। মহান মালিক আমাদেরকে সেই সত্যও ন্যায়ের পথে মতে চলার তৌফিক এনায়েত করুন, এই ঈদে মিলাদুন্নবীতে এই মোনাজাত।
[মুক্তিযোদ্ধা। সেক্রেটারি জেলা জামে মসজিদ, মৌলভীবাজার। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। জজকোর্ট।]
মন্তব্য করুন