১৪৫ টাকা মজুরী প্রত্যাখ্যান সাধারণ চা শ্রমিকদের চাপে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা শ্রমিক নেতার
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগরে চা’বাগান শ্রমিকদের মজুরী ৩’শ টাকা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবিতে টানা ৪দিন আংশিক কর্মসূচি পালন শেষে মালিকপক্ষ দাবি না মানায় গত ১৩ আগস্ট শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে দেশের ৭টি ভ্যালি এবং এর অন্তর্গত ২৩২টি বাগান পঞ্চায়েত এ আন্দোলন করছিল। এরই অংশ হিসেবে রাজনগরের ১২টি বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে বাগান ছেড়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। গত ২০ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের সাথে শ্রমিক নেতাদের এক বৈঠকে দৈনিক মজুরী ১৪৫ টাকা মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের কিছুক্ষণ পরই সাধারণ শ্রমিকের চাপে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেওয়া হয়। এতে বাগান পঞ্চায়েত নেতাদের মধ্যে আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্ঠি হয়েছে।
বাংলাদেশ চা’শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাজনগরের বিভিন্ন বাগান পঞ্চায়েত সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের মজুরী ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে বাংলাদেশের ৭টি ভ্যালি এবং এর অন্তর্গত ২৩২টি বাগান পঞ্চায়েত এ আন্দোলন করে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে রাজনগরের ১২টি বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে বাগান ছেড়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে গত ৯ আগষ্ট মঙ্গলবার থেকে টানা ৪দিন ২ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে। কিন্তু মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ১৪টাকা বাড়িয়ে ১৩৪টাকা মজুরীর প্রস্তাব করলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেয়। গত ১১ আগস্ট বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে আন্দোলন স্থগিতের অনুরোধ জানালে চা শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। টানা ১২ দিন আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ২০ আগস্ট বিকাল ৪টায় শ্রমিকদের মজুরী সংক্রান্ত বিষয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে সরকার পক্ষের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক খালেদ মামুন চৌধূরী, মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক নাহিদুল ইসলাম, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাদিকুর রহামন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন, এনএসআইর মৌলভীবাজার জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ বজলুর রহমান, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মোঃ শামীর অর রশিদ, বাংলাদেশ চা শ্রমিদক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সহ সভাপতি পংকজ এ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা সহ বিভিন্ন ভ্যালির নেতৃবৃন্দ। উভয় পক্ষের আলোচনা শেষে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ১২০ টাকার পরিবর্তে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং শ্রমিক আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের চা শ্রমিক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন। এ সময় তিনি শ্রমিকদের আন্দোলনকালীন ১২ দিনের মজুরী, রেশন সহ আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি প্রদানেরও দাবি জানান। ১৪৫ টাকা মজুরীর সিদ্ধান্ত সহ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর পরই সাধারণ শ্রমিকরা বিক্ষোব্ধ হয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পালকে অবরোদ্ধ করলে শ্রমিকদের চাপে তিনি ১৪৫ টাকা মজুরীর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেন। এতে সাধারণ শ্রমিক ও বাগান পঞ্চায়েত নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্ঠি হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজনগরের চাঁনভাগ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মানিক লাল বাউড়ী ও ম্যাথিউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সুগ্রীম গৌড়, রাজনগর চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মন্টু নুনিয়া জানান, অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের মানবিক দাবি নিয়ে কাউকে দালালি করতে দেয়া হবেনা এবং ১৪৫ টাকা মজুরী শ্রমিকরা মানবে না। শ্রমিকদের দৈনকি মজুরী ৩০০টাকা বৃদ্ধি সহ গৃহ নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের সুস্পষ্ট ঘোষনা না দেয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দিপংকর ঘোষ জানান, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ১৪৫ টাকা দৈনিক মজুরী হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। সন্তোষজনক মজুরী নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত চা শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ চা’শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল জানান, শ্রম অধিদপ্তরের আহ্বানে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম। ওখানে সরকার পক্ষ ১৪৫ টাকা দৈনিক মজুরী প্রস্তাব করলে আমরা এতে দ্বিমত করি। কিন্তু তা মানতে এবং কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষনা দিতে আমাদের বাধ্য করা হয়। সাধারণ শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করায় ১৪৫ টাকা মজুরীর সিদ্ধান্ত বাতিল করে সাধারণ শ্রমিকের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিচ্ছি।
মন্তব্য করুন