(ভিডিওসহ) ৫শত বছরের নিয়ম আজো ধরে রেখেছেন মৌলভীবাজারের শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর কুন্ডে স্নান করতে আসা ভক্তরা
বিকুল চবক্রবর্তী॥ ৫শত বছরের নিয়ম আজো ধরে রেখেছেন জুড়ি ও বড়লেখাবাসী। পবিত্র মধু ত্রয়োদশী তিথিতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর কুন্ডে বারুনী স্নান করে সন্নাসী ও বৈষ্ণব দের সেবার জন্য চাল ও ফল দান করতেন পূন্যারথীরা। সেই নিয়মের ধারাবাহিকতায় আজো শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর মহাদেবের কুন্ডে স্নান করে বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত সন্নাসী ও বৈষ্ণবদের চাল দান করেন ভক্তরা। আর এই পূণ্যস্নানের জন্য মাধবকুন্ডে ভীড় হয়েছে লক্ষাধিক পুণার্থীর।
মাধবকুণ্ড মাধবেশ্বর মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই মাধবকুণ্ড মাধবেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গনে আসতে শুরু করেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে স্নান করে তারা পূজা দেন মাধবেশ্বর মন্দিরে। সন্নাসী ও বৈষ্ণব দের সেবার জন্যদান করেন চাউল ও বিভিন্ন ফলফলাদি । অনেকে পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানকে সুন্দরভাবে শেষ করতে মন্দির পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি স্থানীয় চা বাগান, খাসি পুঞ্জি, বড়লেখা-জুড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ও পুলিশ প্রশাসন বিগত ৩/৪ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সকলের প্রচেষ্টার ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় শনিবার ভোর থেকে মানুষের ঢল নামে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর কুন্ডে।
মাধবকুন্ড মাধবেশ্বর মন্দির পরিচালনা কমিটির যগ্ম অর্থ সম্পাদক গীতেশ রঞ্জন দাশ বলেন, শত শত বছর আগে থেকেই এখানে পূর্ণ্যস্নান হয়ে আসছে । প্রাচীন আমল থেকে এখানে স্নান করে সন্ন্যাসী এবং বৈষ্ণবদের সেবার উদ্দেশ্যে চালদান করা হতো। আজো সেই পরমপরা ধরে রেখেছেন এই অঞ্চলের মানুষ। তিনি বলেন, বারুণী মহা স্নাণের সময় মন্দিরের চার পাশে অনেক সন্নাসী ও বৈষ্ণব অসন পেতে বসেন। ভক্তরা সকল সন্নাসী ও বৈষ্ণবকে অল্প অল্প চাল দেন। পরে মুল মন্দিরের পাশে প্রাচীন সন্নাসীর সমাধি মন্দিরে তারা মুল চাউল ও ফল দান করেন।
বড়লেখা ঝগড়ী গ্রামের লক্ষি রানী দাশ জানান, তিনি প্রায় বছরই বারুণী স্নানে এখানে আসেন। স্নান শেষে সন্নাসীদের সেবার জন্য চাউল দান করেন। এর কারন হিসেবে তিনি জানান, অতিথকালে এখানে একজন সন্নাসী ধ্যানমগ্ন ছিলেন। ভক্তরা স্নান করে সন্নাসীর সেবার জন্য চাল ও ফল রেখে যেতেন। বংশ পরমপরায় তিনিও তা ধরে রেখেছেন।
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের এই অনুষ্ঠানকে শৃংখল রাখতে প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন গত এক সাপ্তাহ ধরে। কুপে স্নানের জন্য পাথর সরানো, উঠা নামার ব্যবস্থাসহ অনেকগুলো কাজ তারা সম্পাদন করেছেন।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য এডভোকেট জলি দাশ বলেন, এই মন্দিরটি জাগ্রত একটি মন্দির। শত শত বছরের প্রাচীণ। এর রয়েছে অনেক পৌরানিক কাহিনী। মন্দিরের নামে রয়েছে বহু জমি। তবে সিলেট বিভাগের প্রাচীনতম একটি মন্দির হিসেবে এর উন্নয়ন সেভাবে হয়নি, এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও সূধীজনদের সহায়তা।
বড়লেখা উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য এডভোকেট গোপাল দত্ত বলেন, এবছর তারা অনেক কাজ করেছেন। যে কারনে নিরবিগ্নে পূণ্য স্নান করতে পেরেছেন লক্ষাধিক ভক্ত। তিনি বলেন, লাক্ষাধিক ভক্তের জন্যই আয়োজন করা হয় মহা প্রসাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পরযন্ত তা বিতরণ করা হয়।
এদিকে এই বারুনী স্নানকে সামনে রেখে মাধবকুণ্ড প্রাঙ্গনে বসেছে বিশাল মেলা। পূন্যস্নান ও পূর্জাচনা শেষে ভক্তরা যোগদেন মেলায়।
মন্তব্য করুন