৫ যুদ্ধাপরাধীর রায় রাজনগরের শহীদ পরিবারগুলোর সন্তোষ প্রকাশ
মু. ইমাদ উদ দীন॥ বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে থাকায় রায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার ১০ জানুয়ারী দুপুরের দিকে রায় ঘোষণার খবর জানাজানি হলে ভূক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সন্তুুষ প্রকাশ করেন।
জেলার রাজনগর উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে জড়িত থাকার ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২ জনকে মৃত্যুদ- ও ৩ জনকে আমৃত্যু কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও ভূক্তভোগী শহীদ পরিবারগুলো সন্তোষ প্রকাশ করেন। রায় দ্রুত কার্যকর করে জেলা ও রাজনগরবাসীকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবী জানান তারা।
বুধবার আন্তর্জাতিক যুদ্ধা অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল রাজনগর উপজেলার জামুরা গ্রামের মৃত ফরজান আলীর ছেলে নেছার আলী (৭৫) ও গয়াসপুর গ্রামের মৃত আব্দুন নূর চৌধুরীরর ছেলে ওজায়ের আহমদ চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দেশ দেন। অপর আসামী বাগাজুরা গ্রামের মৃত আত্তর মিয়া তরফদারের ছেলে সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ (৬৫), সোনাটিকি গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মৌলভী ইউনুছ আহমদ (৭১) ও উত্তর নন্দীউড়া গ্রামের মৃত আলকাছ মিয়ার ছেলে মোবারক মিয়াকে (৬৬) আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। আসামীদের মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ওজায়ের আহমদ চৌধুরী মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা ও আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত মৌলভী ইউনুছ আহমদকে সোনাটিকি গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যান্যদের মধ্যে সামছুল হোসেন তরফদার, নেছার আলী ও মোবারক মিয়া বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয় শহীদ ও ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর খলাগ্রামের ধর বাড়িতে এই রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও বুলেটের ক্ষত রয়েছে দেয়ালের গায়ে। সেই দাগ দেখিয়ে খলাগ্রামের নিহত শতদল ধর চৌধুরীর ছেলে মামলার সাক্ষী শান্তিপদ ধর চৌধুরী রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন পর হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে। এতে আমরা খুশি হয়েছি। রায় দ্রুত কার্যকর করা হলে আমার পিতাসহ অন্যান্য শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।
শহীদ পরিবারের লোকজন জানান, আসামী পক্ষের লোকজন প্রভাবশালী হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরুর পর থেকে তাদের পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। যে কোনো মুহুর্তে শহীদ পরিবারগুলো আক্রান্ত হতে পারেন রায় ঘোষণার পর এমনটিই আশঙ্কা তাদের। এব্যাপারে রাজনগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আমীর আলী বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ায় রাজনগরের মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারগুলো সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর করে রাজনগরকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবী আমাদের।
মন্তব্য করুন