“৬ই জানুয়ারী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন এর শুভ জন্মদিন: দাদাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা”
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ ৬ জানুয়ারী, প্রশাসনিক সংস্কার মূলক চৌদ্দ দফা কর্মসূচী ও নতুন ধারার রাজনীতির প্রবক্তা, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন এর শুভ জন্ম দিন। ৬ইং জানুয়ারী সাতাত্তোর বছরে পা রাখলেন “নিউক্লিয়াস” “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” এর জনক, জননেতা সিরাজুল আলম খাঁন। ৬ইং জানুয়ারী ছিয়াত্তর বসন্ত বিদায় নিল কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন এর বর্ণীল জীবন থেকে। বর্নাঢ্য জীবন থেকে। কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন এর যাপিত ৭৬ বছরের জীবন বর্ণীল। বর্ণাঢ্য। কর্মমুখর। বাঙময়। প্রাণময়। এই ৭৬ বছরের খন্ডিত মানব জীবনে কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন “কর্মই জীবন” এই জীবন ঘনিষ্ট শ্লোগানের অনুসারী হয়ে, মানব কল্যানমুখী কর্মকান্ড দ্বারা মানব জীবনকে গৌরবান্বিত করেছেন। মহিমানিত্ব করেছেন। বিগত সাড়ে পাঁচ দশক যাবত বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির অঙ্গনে যে নাম অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত, সম্পৃক্ত, সে নাম সিরাজুল আলম খাঁন। স্বদেশপ্রেম ও স্বাদেশিকতায় উদ্ভোদ্ধ নিখাদ দেশ প্রেমিক সিরাজুল আলম খাঁন বাংলাদেশী রাজনীতির এক পরিচ্ছন্ন পুরুষ। সেই ষাটের দশকের শুরু থেকে দেশীয় রাজনীতির প্রতিটি আন্দোলনে সংগ্রামে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন, সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন জননেতা সিরাজুল আলম খাঁন। নিজের চাওয়া-পাওয়া কামনা-বাসনাকে উপেক্ষা করে এক পরিপূর্ণ মানুষ সিরাজুল আলম খাঁন নিজেকে গোটা মানব জীবনকে উপহার দিয়েছেন, উৎসর্গ করেছেন দেশ ও জাতীর কল্যাণে। অকৃতদার সিরাজুল আলম খাঁনের ঘর-সংসার তাঁর সাড়ে পাঁচ দশকের প্রিয় সহকর্মিবৃন্দ। তাঁর সহকর্মিগণকে তিনি সহোদরের মত, সন্তানের মত ¯েœহ-মমতা করেন। প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন।
তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন বাংলাদেশী রাজনীতির এক পরিচ্ছন্ন পুরুষ। তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি, জীবন দর্শন, চিন্তা চেতনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিব্রত বোধ করেননি, সংগঠক সিরাজুল আলম খাঁন। অসম্ভব রকমের মেধাবী ছাত্র সিরাজুল আলম খাঁন কিশোর বয়সেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেঁ জড়িত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই তিনি তৎকালীন সময়ের বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সংগ্রামী সংগঠন “ছাত্রলীগের” কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সিরাজুল আলম খাঁনের ছাত্র রাজনীতির জীবনের গৌরবময় অধ্যায় ষাটের দশক। ১৯৬৩-৬৪ এবং ৬৪-৬৫ সালে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রয় কমিটির
সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একজন বলিষ্ট সংগঠক হিসাবে তিনি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিতকে মজবুত করেন। তাঁর রাজনৈতিক দুরদর্শিতা প্রশংসার দাবীদার। তিনি মরমে মরমে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বাঙ্গালির জাতীয় রাষ্ট্র ছাড়া জাতীয় মুক্তি সম্ভব নয়। স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টা সিরাজুল আলম খাঁন ১৯৬২ সালে গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। বাঙ্গালির জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে গঠিত “নিউক্লিয়াস” ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামেও অভিহিত। সাচ্চা জাতীয়তাবাদী সিরাজুল আলম খাঁন ঐতিহাসিক ছয় দফা-এগারো দফার আন্দোলন, সত্তোর সালের সাধারণ নির্বাচনে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন। আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামী সিরাজুল আলম খাঁনের ঐতিহাসিক ভূমিকা মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। তাঁর এই ঐতিহাসিক ভূমিকাও অবদান দেশও জাতি চীরকাল কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করবেন। তিনি ছিলেন Bengal Libration front এর সংগঠক। মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, রাষ্ট্র পরিচালনায় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের ব্যর্থতায় দেশও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করতঃ সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার উষা লগ্নে গঠিত দেশের প্রথম বিরোধীদল জাতীয় সমাজ তান্তিক দল ‘জাসদের’ প্রাণ পুরুষ ও তাত্বিক ছিলেন কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন।
সেই ষাটের দশক থেকে দেখছি কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁনকে। তিনি আমাদের প্রজন্মর রাজনীতির শিক্ষাগুরু। দীক্ষাগুরু। তাঁরই প্রেরণায় ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ঐ দশকে প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও রাজনীতির সেই বেরাজাল থেকে এখনও বেরুতে পারিনি। তখন ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু ছিল ঐতিহ্যবাহী ইকবাল হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্ব থেকেই ইকবাল হলে আনাগুনা ছিল। ইকবাল হলেই ছিল তাঁর এবং ছাত্রলীগ নেতাদের মূল আস্তানা। স্বাধীনতা উত্তরকালে ইকবাল হল সার্জেন্ট জহুরুল হক নাম ধারন করেছে। অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছি তাঁর নির্দেশে। মুক্তি যুদ্ধের পূর্বাবস্থায় সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল করেছি তারই নির্দেশে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশের প্রথম বিরোধী দল ‘জাসদে’ যোগ দিয়েছি, তারই অনুপ্রেরণা ও নির্দেশে।
দুরন্ত যৌবনকালে, পুরো যৌবনকাল, আড়াই দশক জাসদের মশাল বহন করেছি। দূর থেকে কাছে থেকে দেখেছি, দেখছি এক নির্লোভ, নিঃস্বার্থে দেশ প্রেকিককে। সাধারণ পোষাক। মুড়ি ডালভাত সাধারণ আহার। মাঝখানে সিতে কাটা বাবরি চুল। পঞ্চমজর্জ্বীয় ষ্টাইলে এক মুখ চাপ দাড়ি। গোলগাল মুখ। বুদ্ধিদীপ্ত দুই চোখ। শিশুর মত সহজ। সরল। ৭৬ বসন্ত পেরিয়ে জীবন সংগ্রামী সিরাজুল আলম খাঁনের মুখাবয়বে এখন বয়সের ছাপ। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েগেছে। তাঁর চুল দাড়ি হয়েছে সফেদ সাদা। জ্ঞান চর্চা, জ্ঞানার্জন, বই তাঁর নিত্য সঙ্গী। অংকের ডিগ্রীধারী সিরাজুল আলম খাঁন আমেরিকার একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপনা করে দেশও জাতির মুখ উজ্জল করেছেন।
আসির কোঠায় এসেও উচ্ছল তারুণ্যে দীপ্তিতে ভরপুর কর্মবীর সিরাজুল আলম খাঁন। তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন তাঁর প্রিয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘দাদা’ হিসাবে অভিহিত। সিরাজুল আলম খাঁন জেনারেশন গ্যাপ এর উর্ধ্বে। কিশোর, যুবক, সকলের কাছেই তিনি সমান প্রিয়। শিশুদেরকেও দারুণ ভালোবাসেন দাদা ভাই। কাগজ নয়, পাথরে নয় তিনি আমাদের হৃদয়ে তাঁর নাম লিখিয়েছেন। মায়ায়। মমতায়। আন্তরিকতায়। ভালোবাসায়। কবি যথার্যই বলেছেন “হৃদয়ে লিখো নাম, সেনাম থেকে যাবে”। তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে তাঁর নাম লিখিয়েছেন। তাঁকে নিয়েই কাব্য করা যায়।
“তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন সবার প্রিয় দাদা,
ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই, ভিতরে বাহিরেই সাদা”
আমার ছাত্র রাজনীতির দীক্ষাও শিক্ষা গুরু দাদা সিরাজুল আলম খাঁনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
[ ষাটের দশকে দাদার ¯েœহ ধন্য কর্মি। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট, হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসকøাব]
মন্তব্য করুন