৬ ডিসেম্বর বড়লেখা মুক্ত দিবস
কুলাউড়া অফিস॥ ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বড়লেখা মুক্ত দিবস। মৌলভীবাজার জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা। অনিন্দ সুন্দর নিসর্গের এক মায়াপুরী এ থানাটি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জাতীর সুদীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামে বড়লেখার মানুষ চালিয়েছে মরনপণ সংগ্রাম। প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে অনবদ্য অবদান রেখে জন্ম দিয়েছে গর্বের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বেল বড়লেখাবাসী জেগে উঠেছিল রণহুঙ্কারে। প্রায় ৩২৫টি গ্রাম যেন প্রতিরোধের এক একটি দূর্গে পরিণত হয়। বড়লেখার প্রতি কণা মাটি ফুসে উঠে আগ্নেয়গিরির অবিনাশী ক্ষমতায়। গোটা নয় মাস স্বাধীনতার দূর্নিবার স্বপ্নে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়েছে বড়লেখার মুক্তিকামী সংগ্রামী জনতা। সর্বব্যাপী যুদ্ধে বড়লেখার বিস্তৃত সবুজ মাঠ, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পরিণত হয় রণাঙ্গনে। সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের অনির্বান চেতনায় উদ্দীপ্ত জনতা রচনা করেছে অসংখ্য বীরত্বের কীর্তি গাথা অবিশ্বাস্য উপাখ্যান। এ থানার শত শত মুক্তিযোদ্ধা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজেদের মহিমান্বিত করেছেন পরম নিষ্ঠায়। এর মধ্যে কয়েকজন দামাল সন্তান শহীদ হয়েছেন বিভিন্ন রণাঙ্গনে। বড়লেখা থানাটি ৪নং সেক্টরের আয়ত্তাভুক্ত ছিল। মেজর সি.আর দত্ত সেক্টর কামান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। এ সেক্টরের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের করিমগঞ্জে প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে। বড়লেখা থানার পার্শ্ববর্তী বার পুঞ্জি ও কুকিরতলে সাব সেক্টর স্থাপন করা হয়। হানাদারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ছোট বড় আক্রমন চালিয়েছে এ সাব সেক্টরের মুক্তি সেনারা। যুদ্ধের সুচনাতেই বড়লেখার স্থানে স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সংগ্রামী বড়লেখাবাসী। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তাঁরা নেমে পড়েন শত্রুর মোকাবেলায়। জানা যায়, বড়লেখায় মুক্তিযুদ্ধারা যেসব স্থানে অপারেশন চালায় তাদের মধ্যে গ্রামগুলো হলো-লাতু, সারপার, শাহবাজপুর, ধামাই চা বাগান, হাকালুকি পারের কয়েকটি গ্রাম, বোরতল, মাইজগ্রাম, ডিমাই, কেছরিগুল, কাঠালতলী, মাধবকুন্ড, দশঘরি। এগুলো মুক্তিযুদ্ধারা ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করত। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে নাকাল হানাদারা বড়লেখা ছাড়তে বাধ্য হয়।
৬ ডিসেম্বর ভোরে বড়লেখা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়। পরে বর্তমান উপজেলা পরিষদের সামনে এক বিজয় সমাবেশ করা হয়। বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কামান্ডার বলেন, ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যেসব রাজাকার, আলবদর ঘড় বাড়ী জ্বালিয়েছে, মা-বোনের ইজ্জত হরন করেছে, নর-নারীকে হত্যাকরেছে তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে করে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন কুলাউড়া, বিয়ানীবাজারের চেয়ে ও বড়লেখায় বেশি নারী নির্যাতন এবং হত্যাকান্ড হয়েছে।
মন্তব্য করুন