৬ ডিসেম্বর রাজনগর মুক্ত দিবস
রাজনগর প্রতিনিধি॥ ৬ ডিসেম্বর রাজনগর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজনগর উপজেলা পাকসেনাদের কবল থেকে মুক্ত হয়। যৌথবাহিনীর কামান্ডার কর্নেল এমএ হামিদ প্রথম লাল সবুজের বিজয় পতাকা উড়ান রাজনগরের ক্লাব প্রাঙ্গনে। এর আগে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে রাজনগর বিজয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সম্প্রতি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শহীদ মিনার’।
এদিকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এবারই প্রথম রাজনগর মুক্ত দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। রাজনগর মুক্ত দিবস উপলক্ষে সকাল ১১ টায় পতাকা উত্তোলন, ১১.১৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১১.৩০ মিনিটে র্যালী ও দুপুর ১২টা থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজনগর মুক্ত দিবসের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান।
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাচঁগাও এবং খলাগ্রামে মর্মান্তিক গনহত্যা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ করে নরপশুরা। এসব ঘটনায় এখানকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মনে এখনো আতংকের সৃষ্ঠি করে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম প্রতিরোধ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা সংবলিত মিছিল সহকারে কৃষক, শ্রমিক এমনকি সরকারী পেশাজীবিরাও অফিস আদালতে অনুপস্থিত থেকে প্রতিরোধ সমাবেশে অংশ গ্রহন করেন। ওই সমাবেশে রাজনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা আনুষ্টানিক ভাবে উত্তোলন করা হয়। পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধের শেষ সময়ে অপারেশন শুরু করে উদনা চা বাগানে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা শমসেরনগর অবস্থান গ্রহন করেন। সেখান থেকে ৪ ডিসেম্বর ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মৌলভীবাজার হয়ে রাজনগর পৌঁছে। তারা উদনা চা বাগান আক্রমনের চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহন করেন। ৫ ডিসেম্বর হিম শীতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবেশ করেন উদনা চা বাগানে। ত্বড়িত আক্রমন করেন পাকসেনাদের উপর। টানা দুদিন যুদ্ধের পর ৬ ডিসেম্বর ভোর হবার সাথে সাথে পাকসেনারা পালাতে শুরু করে। এতে বহু পাকসেনা মারা যায়। ৬ ডিসেম্বর রাজনগর শত্রু মুক্ত হয়। শ্বাসরুদ্ধকর বিভিষিকা থেকে রাজনগরের মানুষ মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া পায়। গ্রামছাড়া মানুষ আবার আসতে শুরু করে গ্রামে। হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিসেনারা হানাদার ক্যাম্পের যাবতীয় অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করেন। অস্ত্র ও গোলা-বারুদের পরিমান ছিল অসংখ্য। মুন্সীবাজার ও উদনা চাবাগান থেকে মোট ৫ ট্রাক অস্ত্র ও গোলা-বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
এব্যাপারে রাজনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সজল চক্রবর্তী বলেন, এবারই প্রথম রাজনগর মুক্ত দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পন, পতাকা উত্তোলন, র্যালী ও যুদ্ধের স্মৃতিচারণ নিয়ে আলোচনা সভা করা হবে।
মন্তব্য করুন