৭ বছর ধরে বিভক্তি, নিস্ক্রিয় নেতাকর্মীরা: মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে সমঝোতার আভাস!
হোসাইন আহমদ॥ দলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই যখন চলছে তখনই মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা সে লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ না করে পদ-পদবী নিয়ে নিজেদের ঘরে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ৭ বছর বিভক্ত কার্যক্রমের পরিচালনার পর কয়েক ধাপ ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে সমোঝতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই গুঞ্জণে জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছাস বিরাজ করছে। তবে এ উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে এমন প্রশ্ন দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে!
জেলা সভাপতি ও সম্পাদক দুটি বলয়ে পরিচালনা করছেন জেলার দলীয় কার্যক্রম। যার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো। জেলার ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়নে পাল্টা-পাল্টি কমিটি করছেন তারা। এ নিয়ে তৃণমূল নেতকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যার কারণে অনেক নেতাকর্র্মীরা সরকার বিরুধী আন্দোলনে না গিয়ে নিজেদের গ্রুপিং নিয়ে ব্যবস্থ সময় কাঠাচ্ছেন।
দলের এই ক্লান্তিলগ্নে, সংকটপূর্ণ সময়ে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় কোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারেননি বিভক্ত মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি। দলের অস্তিত্ত্ব রক্ষার লড়াইয়ে অন্যান্য জেলা হরতাল, অবরোধ, মিছিল ও সমাবেশসহ কেন্দ্রের দেওয়া সকল কর্মসূচি সতস্ফূর্ত ভাবে পালন করলেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মৌলভীবাজার। এ নিয়ে দলের তৃণমূল ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে অন্তর দ্বন্দ দেখা দিয়েছে পদ লোভীদরে। অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘ দিন নিস্ক্রিয় থাকার পর অন্য রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত হচ্ছেন আবার কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। যার ফলে আগামী দিনে এ বৃহত্তম দলটি নেতাকর্মী সংকটে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
ওই বিভক্তির কারণে বিগত স্থানীয় নির্বাচন গুলোতেও ভালো ফলাফল করতে পারেনি সাবেক ক্ষমতাশীন দল। ২০১১ সালে পৌর নির্বাচনে জেলার সবকটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও গত পৌর নির্বাচনে একটিতেও বিজয়ের মুখ দেখতে পারেনি তারা। বিগত উপজেলা নির্বাচনে সদরে সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান ছাড়া আর কেউই এ জেলায় নির্বাচিত হতে পারেননি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড পর্যায়েও দলটির এমন বেহাল অবস্থা। দলটির চতুর্দিকে শুধু আহাকার বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাইফুর রহমান ছিলেন পুরো সিলেট বিভাগের বিএনপির অভিভাবক। তখন নেতাদের মধ্যে পদ-পদবি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কোন্দল করার সাহস দেখাননি কেউ। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে দলকে ঢেলে সাজানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে সাইফুর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তা ব্যাহত হয়। ফলে মৌলভীবাজারে দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই পদ-পদবি নিয়ে বিভক্তি ঘটে নেতাদের মধ্যে।
দলীয় নেতাদের মতে, ২০০৯ সালে সাবেক এমপি এম নাসের রহমানকে সভাপতি করে যে কমিটি দেওয়া হয়েছিল তাতে বাদ পড়েন অনেক নেতা। বাদ পড়া নেতারা পাল্টা কমিটি গঠন করেন। ফলে কেন্দ্র অনেকটা বাধ্য হয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের জন্য এম নাসের রহমানকে জেলা সভাপতি ও খালেদা রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল মুকিতকে প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক করে একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। একই ভাবে জেলার সাত উপজেলা এবং পাঁচ পৌরসভায় উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে কাউন্সিল করার জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালের জাতীয় কাউন্সিল থেকে ফিরেই আলাদা আলাদা দলীয় কার্যক্রম শুরু করেন জেলার এই দুই শীর্ষ নেতা।
দীর্ঘ দিনের মেরুকরণ নিষ্পত্তির জন্য বিএনপির চেয়ারপার্স সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-মহাসবি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও শাখাওয়াত হোসেন জীবন এর নেতৃত্বে একটি টিম পৃথক পৃথক ভাবে দু-গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উপস্থিত নেতকার্মীদের খোলামেলা মতামত নিয়েছেন। ইতি পূর্বে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান সমোঝতার জন্য মৌলভীবাজার সফর করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের কোনো চেষ্টাই এখানে সফল হয়নি। এমনকি ২০১৪ সালে এ বিষয়ে ডাকা একটি সভায় কেন্দ্রের নেতাদের আনা হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে শহরের হাসপাতাল রোডে দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৪০-৫০ জনের মতো কর্মী আহত হন।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, নিজেদের পদ-পদবির কথা চিন্তা না করে দলের অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে ঐক্য এখন সময়ের দাবি। কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে আগামী নির্বাচনে এর নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে দলটির উপর। নিজেদের বৃদ্ধমান দ্বন্দ সমাধান করে বেগম জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললেই আগামী দিনে সফলতার আশা করা যায়।
মন্তব্য করুন