খাদ্যে ও পানিতে চেতনা নাশক মিশিয়ে অবচেতন কমলগঞ্জের শমশেরনগরে তিনটি ফ্লাটে ডাকাতি ॥ শিশু ও নারীসহ গুরুতর অসুস্থ্য-৮
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে দুইটি চারতলা ভবনের তিনটি ফ্ল্যাটে রাতে জানালার গ্রীল ভেঙ্গে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। ডাকাতদল ফ্ল্যাটের বসতিদের খাদ্যে ও পানিতে চেতনা নাশক মিশিয়ে দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৬ থেকে সাত লক্ষাাধিক টাকার স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। চেতনা নাশকে তিনটি পরিবারের শিশু ও নারীসহ ৮ জন গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে এ ঘটনাটি ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শমশেরনগর বিএএফ শাহীন কলেজ সংলগ্ন বিমান বন্দর সড়ক আবাসিক এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী এখলাছুর রহমানের চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়াটে প্রবাসী মোনায়েম আহমদের ফ্ল্যাটে বুধবার রাত ৯টায় রান্না ঘরের ফিল্টারের পানি পান করে তিন ছাত্রী ঘুমিয়ে পড়ে। এ ফ্ল্যাটের গৃহিনী ফিল্টারের পানি পান না করায় তিনি কয়েকজন স্বজন নিয়ে আকস্মিকভাবে ঘুমিয়ে পড়ে তিন ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনার পর থেকে ব্যস্ত থাকায় তার ঘরে আর কোন ধরনের ডাকাতি হতে পারেনি। এ ফ্ল্যাটে চেতনা নাশকে অসুস্থ্য বিএএফ শাহীন কলেজে পড়–য়া ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থী মায়মোনা মোনায়েমকে বিশেষ চিকিৎসা সেবা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করাতে হেয়েছে।
তবে পাশের ইয়ামিছ আলীর তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়াটে আবু সাদেকের এক কক্ষের ও তৃতীয় তলার সহকারী প্রকৌশলী আল মামুনের ঘরের জানালার গ্রীল ভেঙ্গে সুযোগ সন্ধানী ডাকাত সদস্যরা রান্না করা খাদ্যে চেতনা নাশক মিশিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। রাত গভীর হলে ডাকাত সদস্যরা এ দুটি ফ্ল্যাটের আলমারী তছনছ করে প্রায় ১২ ভরি পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিরাপদে বেরিয়ে যায়। লুটে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কারের বাজার মূল্য ৬ লক্ষাধিক টাকা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশীরা গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় তিনটি ফ্ল্যাটের প্রকৌশলী আল মামুন, এক শিশুসহ ছয়জন নারী সদস্যকে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করে। এর মাঝে অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় প্রকৌশলী আল মামুনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রবাসী মোনায়েম আহমদের ফ্ল্যাটের দুই ছাত্রীকে কুলাউড়া উপজেলা সদরে মুসলিম এইড হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান ও শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাজী এখলাছুর রহমানের ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের রান্না ঘরের জানালার পাশে থাকা পানির ফিল্টারে বাহির থেকে চেতনা নাশক মিশানো হতে পারে। তবে পাশের ভবনে জানালার গ্রীল ভেঙ্গে খুবই চাতুরীপনার সাথে খাদ্যে চেতনা নাশক মিশিয়ে ডাকাতদল গভীর রাতে ডাকাতি করেছে বলে মনে হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কিরণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, তার সহকারী প্রকৌশলী আল মামুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি নিজে তাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে গেছেন।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনায় পুলিশ জোর তদন্ত শুরু করেছে। তবে বিক্ষোব্দ এলাকাবাসী বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি স্থানে রাতে যাত্রা পালাসহ বড় ধরনের জুয়ার আসর বসায় ক্রমেই চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে।
মন্তব্য করুন