উপমহাদেশের একমাত্র লাল দুর্গার পূজা হয় মৌলভীবাজারের পাঁচগাওয়ে
ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে শুরু হয়েছে উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গাদেবীর পূজা অর্চণা। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া তিনশ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ব্যতিক্রমী এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে। দেশের আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা নেই। প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে দশমীর বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পাঁচ দিনে দেবী দর্শনে লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে এখানে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পদচারণায় নিভৃত গ্রামটি হয়ে ওঠে কোলাহল মুখর। উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন দেবী দর্শনের জন্য। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাঁচগাঁও নামক স্থানে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। সিলেট বিভাগ মতান্তরে দেশের অন্যতম একটি লাল দুর্গা ম-প এটি। পূজা শুরু হলে রাজনগর উপজেলা সদরের কমলারাণীর দিঘির পূর্বদিক থেকে যানবাহন ও পুণ্যার্থীদের ভিড় শুরু হয়। কাল অষ্টমী ও নবমী পূজার দিনে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পুণ্যার্থীরা হেঁটে পাড়ি দিয়ে পূজা ম-প দর্শনে যাবেন। লালবর্ণের জাগ্রত দেবীদুর্গা দর্শনে প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে এখানে। পূজার সময় শতশত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবেনা। পূজা উদযাপন কমিটির পরিচালক সঞ্জয় দাস জানান, মূলতঃ এটি পারিবারিক পূজা। পূজা পরিচালনাকারীদের মধ্যে তিনি এখন ষষ্ঠ পুরুষ। তার পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস ধ্যানে বসে কুমারী পূজার মাধ্যমে লাল দুর্গার দর্শন পাওয়ার পর প্রতিবছর এখানে লাল দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরও জানান, প্রায় তিনশ বছর ধরে তাদের বাড়ির ম-পে লাল দুর্গার পূজা হচ্ছে। এখানে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও ছেদ পড়েনি। শুধুমাত্র একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সেবার ঘটে পূজা হয়েছিল। সঞ্জয় দাস লাল দুর্গা পূজার ইতিহাস জানান এভাবে: তাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরুপ-কামাক্ষ্যা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, তুমি আমার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাও। আমি তোমাকে বর (আশীর্বাদ) দিব। সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ হবে লাল। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মুর্ত্তির পূজা হয়ে আসছে। ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা। দেবী দর্শনার্থী অনুকুল পাল জানান, অন্য প্রতিমা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। লাল বর্ণের দেবী মূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। যে কারণে এই প্রতিমার কাছে ভক্তদের অনেক আশা-আকাংখা। দুর্গা পূজা ম-পকে ঘিরে প্রায় আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখন মেলা বসেছে। কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হচ্ছে খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি কতকিছু। এখানে আগত হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা তাদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান। কেউবা পশু বলি দেন। গত বছর পূজাতে প্রায় সাড়ে ৫০০ পাঁঠা, ৬টি মহিষ ও প্রায় ৭০০ জোড়া কবুতর দেবীর নামে বলি দেওয়া হয়েছে। এখানে দুর্গা ম-প একটি, নাট মন্দির একটি, যজ্ঞ মন্দির একটি, যাত্রী নিবাস একটি, ভোগ মন্দির একটি, ফুল নৈবদ্য রাখার ঘর একটি, শিব মন্দির একটি এবং পাকা ঘাটসহ পুকুর একটি রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মিহির কান্তি দে মিন্টু জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও শান্তিপূর্নভাবে পাঁচগাঁওয়ে পূজা উদযাপনের জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে শুরু হয়েছে উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গাদেবীর পূজা অর্চণা। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া তিনশ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ব্যতিক্রমী এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে। দেশের আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা নেই। প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে দশমীর বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পাঁচ দিনে দেবী দর্শনে লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে এখানে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পদচারণায় নিভৃত গ্রামটি হয়ে ওঠে কোলাহল মুখর। উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন দেবী দর্শনের জন্য। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাঁচগাঁও নামক স্থানে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। সিলেট বিভাগ মতান্তরে দেশের অন্যতম একটি লাল দুর্গা ম-প এটি। পূজা শুরু হলে রাজনগর উপজেলা সদরের কমলারাণীর দিঘির পূর্বদিক থেকে যানবাহন ও পুণ্যার্থীদের ভিড় শুরু হয়। কাল অষ্টমী ও নবমী পূজার দিনে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পুণ্যার্থীরা হেঁটে পাড়ি দিয়ে পূজা ম-প দর্শনে যাবেন। লালবর্ণের জাগ্রত দেবীদুর্গা দর্শনে প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে এখানে। পূজার সময় শতশত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবেনা। পূজা উদযাপন কমিটির পরিচালক সঞ্জয় দাস জানান, মূলতঃ এটি পারিবারিক পূজা। পূজা পরিচালনাকারীদের মধ্যে তিনি এখন ষষ্ঠ পুরুষ। তার পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস ধ্যানে বসে কুমারী পূজার মাধ্যমে লাল দুর্গার দর্শন পাওয়ার পর প্রতিবছর এখানে লাল দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরও জানান, প্রায় তিনশ বছর ধরে তাদের বাড়ির ম-পে লাল দুর্গার পূজা হচ্ছে। এখানে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও ছেদ পড়েনি। শুধুমাত্র একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সেবার ঘটে পূজা হয়েছিল। সঞ্জয় দাস লাল দুর্গা পূজার ইতিহাস জানান এভাবে: তাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরুপ-কামাক্ষ্যা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, তুমি আমার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাও। আমি তোমাকে বর (আশীর্বাদ) দিব। সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ হবে লাল। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মুর্ত্তির পূজা হয়ে আসছে। ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা। দেবী দর্শনার্থী অনুকুল পাল জানান, অন্য প্রতিমা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। লাল বর্ণের দেবী মূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। যে কারণে এই প্রতিমার কাছে ভক্তদের অনেক আশা-আকাংখা। দুর্গা পূজা ম-পকে ঘিরে প্রায় আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখন মেলা বসেছে। কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হচ্ছে খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি কতকিছু। এখানে আগত হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা তাদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান। কেউবা পশু বলি দেন। গত বছর পূজাতে প্রায় সাড়ে ৫০০ পাঁঠা, ৬টি মহিষ ও প্রায় ৭০০ জোড়া কবুতর দেবীর নামে বলি দেওয়া হয়েছে। এখানে দুর্গা ম-প একটি, নাট মন্দির একটি, যজ্ঞ মন্দির একটি, যাত্রী নিবাস একটি, ভোগ মন্দির একটি, ফুল নৈবদ্য রাখার ঘর একটি, শিব মন্দির একটি এবং পাকা ঘাটসহ পুকুর একটি রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মিহির কান্তি দে মিন্টু জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও শান্তিপূর্নভাবে পাঁচগাঁওয়ে পূজা উদযাপনের জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার॥
মন্তব্য করুন