১৭ না, ৩৬ দল নিয়ে জাতীয় নির্বাচন
কার অধিনে নির্বাচন? বাংলাদেশ বর্তমানে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিবিধ তো বটেই, যারা কোন দিন রাজনীতি করেন নি তাঁরাও এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা করে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন। দেশে চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মহাজোট সরকার অবস্থান নিয়েছে সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচন করতে। মন্ত্রিসভা রেখে, সংসদ রেখে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে বার বার। প্রথানুযায়ী গত সোমবার মন্ত্রীসভার শেষ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সচিব জানায়, এটাই শেষ বৈঠক নয়। বৈঠক আরো হবে। মহাজোট সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি সকলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন করার কথা বলছে। শক্ত অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে ১৮ দলীয় প্রধান ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানের তোয়াক্কা না করে গত সোমবার তত্তাবধায়ক সরকারের নতুন ফলর্মূলা দিয়েছেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে দুই জোটের মনোনিত ১০ জনকে নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তাদের অধিনে নির্বাচন করলে এখন করতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু বিপত্তি হলো দুই নির্বাচনে ২০ জন উপদেষ্টার মধ্যে ৫ জন মারা গেছে, দুই জন গুরুতর অসুস্থ্য এবং কয়েকজন শারীরিকভাবে অক্ষম। আবার কয়েকজন বয়সের কারণে অযোগ্য হতে পারেন। এবং বাকীরা দায়িত্ব নিবেন কিনা সংশয় রয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ২১ অক্টোবর বলেছেন, বিএনপি না গেলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে বৈঠকের পরের দিন এরশাদের এ বক্তব্য জানান দেয় মহাজোটে ভাঙ্গনের সুর। রাশেদ খান মেননের দলও একই দিকে হাঁটছে। বাংলাদেশ জমায়াত ইসলামী মাঠে শক্তিশালী হলেও দলের নিবন্ধ নিষিদ্ধ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না মিডিয়াতে। ফলে ১৮ দলীয় জোটের কথাই তাদের কথা বলে মনে হচ্ছে। আগামী নির্বাচন হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় ঘণিভূত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের অধিনে নির্বাচন চাইবে, কারণ তারা ৫টি সিটি নির্বাচন করে প্রমাণ করেছে তারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ ছিলো। যদিও ৫-০ তে বিদায় নেওয়ার পর তারা জাতীয় নির্বাচনও তাদের অধিনে অনুষ্ঠিত করতে দীড় প্রতিজ্ঞ। যে কোন মূল্যে (সভা-সভাবেশ নিষিদ্ধের মতো) তারা বিরোধী দলের বা জোটের আন্দোলন বানচাল করতে চাইবে। অন্যদিকে বিএনপি তথা ১৮ জোট নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না। (তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জাতীয় পার্টিকে তেমন বিশ্বাস করা যায় না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে পানি দেখে তারা ছাতা ধরবে।) ফলে ১৮ জোট নির্বাচনে না গেলে দেশের নিবন্ধিত ৩৬টি দলের মধ্যে ১৯টি দল বাহিরে থাকছে। ফলে অর্ধেকের বেশি দলকে বাহিরে রেখে নির্বাচন কিভাবে সম্ভব করবে নির্বাচন কমিশন বা মহাজোট সরকার। সেটা দেশের জনগণ বা বিরোধী জোট কিভাবে গ্রহণ করবে? বহিঃবিশ্বে সেই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেহেতু সংসদ ভাঙ্গে নি, মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠক হয় নি, মনে হচ্ছে সরকার আরে বেশি ক্ষতায় থাকতে চাই। তাদের অধিনে নির্বাচন হলে বর্তমান সংসদ, মন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল পাবেন। তারা সরকারি গাড়ি, বাড়িসহ সব ধরণের লজিষ্টিক সুবিধা পাবে। অন্যদিকে মন্ত্রী থাকায় প্রশাসন ইচ্ছা না থাকলেও তাদেরকে প্রটোকল দিতে হবে। কারণ তারা এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অধিনের কমকর্তা বা কর্মচারী। গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের জন্য নির্বাচন না হয়ে ক্ষমতার চেয়ারের নির্বাচন বলে তারা প্রভার বিস্তার করতেই পারেন বা করবেন এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে পতনের মতো কোন আন্দোলন বিএনপি করতে পারে নি। গত প্রায় ৫ বছরে অনেক ইস্যু থাকলেও বিএনপি ছিলো নিশ্চুপ। সিটি নির্বাচনে জয় লাভ করা, হেফাজত, জাতায়াত ইসলামীর আন্দোলনে বিএনপির নেতারা উপলগ্ধি করছেন নির্বাচনে তারাই জয়লাভ করবে। নেতাদের অবস্থা এমন, যে দলের নমিনেশন পেলেই তো এমপি হচ্ছি। তবে কেন খামাখা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সরকারের দমন-পীড়নের মধ্যে মধে পড়ে জেলে যাবো। তাদের ধারণা আমি জেলে গেলে এমপি হবে কে? ফলে তারা আন্দোলনে যাচ্ছে না? এমনও অবস্থা হচ্ছে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ২/৩ দিন আগে গণমাধ্যমে ঘোষণা করতে হয়। নেতাদের মোবাইলে বা বাসায় পাওয়া যায় না। ফলে বেগম জিয়া আন্দোলন করবেন কাদের নিয়ে? এ অবস্থায় সরকার কি করবে? সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে সমঝোতা, না বাকী ১৭টি দল নিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। লেখক : স্কাউটার ও কলাম লেখক, ঢাকা,
কার অধিনে নির্বাচন? বাংলাদেশ বর্তমানে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিবিধ তো বটেই, যারা কোন দিন রাজনীতি করেন নি তাঁরাও এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা করে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন। দেশে চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মহাজোট সরকার অবস্থান নিয়েছে সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচন করতে। মন্ত্রিসভা রেখে, সংসদ রেখে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে বার বার। প্রথানুযায়ী গত সোমবার মন্ত্রীসভার শেষ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সচিব জানায়, এটাই শেষ বৈঠক নয়। বৈঠক আরো হবে। মহাজোট সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি সকলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন করার কথা বলছে। শক্ত অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে ১৮ দলীয় প্রধান ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানের তোয়াক্কা না করে গত সোমবার তত্তাবধায়ক সরকারের নতুন ফলর্মূলা দিয়েছেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে দুই জোটের মনোনিত ১০ জনকে নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তাদের অধিনে নির্বাচন করলে এখন করতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু বিপত্তি হলো দুই নির্বাচনে ২০ জন উপদেষ্টার মধ্যে ৫ জন মারা গেছে, দুই জন গুরুতর অসুস্থ্য এবং কয়েকজন শারীরিকভাবে অক্ষম। আবার কয়েকজন বয়সের কারণে অযোগ্য হতে পারেন। এবং বাকীরা দায়িত্ব নিবেন কিনা সংশয় রয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ২১ অক্টোবর বলেছেন, বিএনপি না গেলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে বৈঠকের পরের দিন এরশাদের এ বক্তব্য জানান দেয় মহাজোটে ভাঙ্গনের সুর। রাশেদ খান মেননের দলও একই দিকে হাঁটছে। বাংলাদেশ জমায়াত ইসলামী মাঠে শক্তিশালী হলেও দলের নিবন্ধ নিষিদ্ধ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না মিডিয়াতে। ফলে ১৮ দলীয় জোটের কথাই তাদের কথা বলে মনে হচ্ছে। আগামী নির্বাচন হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় ঘণিভূত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের অধিনে নির্বাচন চাইবে, কারণ তারা ৫টি সিটি নির্বাচন করে প্রমাণ করেছে তারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ ছিলো। যদিও ৫-০ তে বিদায় নেওয়ার পর তারা জাতীয় নির্বাচনও তাদের অধিনে অনুষ্ঠিত করতে দীড় প্রতিজ্ঞ। যে কোন মূল্যে (সভা-সভাবেশ নিষিদ্ধের মতো) তারা বিরোধী দলের বা জোটের আন্দোলন বানচাল করতে চাইবে। অন্যদিকে বিএনপি তথা ১৮ জোট নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না। (তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জাতীয় পার্টিকে তেমন বিশ্বাস করা যায় না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে পানি দেখে তারা ছাতা ধরবে।) ফলে ১৮ জোট নির্বাচনে না গেলে দেশের নিবন্ধিত ৩৬টি দলের মধ্যে ১৯টি দল বাহিরে থাকছে। ফলে অর্ধেকের বেশি দলকে বাহিরে রেখে নির্বাচন কিভাবে সম্ভব করবে নির্বাচন কমিশন বা মহাজোট সরকার। সেটা দেশের জনগণ বা বিরোধী জোট কিভাবে গ্রহণ করবে? বহিঃবিশ্বে সেই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেহেতু সংসদ ভাঙ্গে নি, মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠক হয় নি, মনে হচ্ছে সরকার আরে বেশি ক্ষতায় থাকতে চাই। তাদের অধিনে নির্বাচন হলে বর্তমান সংসদ, মন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল পাবেন। তারা সরকারি গাড়ি, বাড়িসহ সব ধরণের লজিষ্টিক সুবিধা পাবে। অন্যদিকে মন্ত্রী থাকায় প্রশাসন ইচ্ছা না থাকলেও তাদেরকে প্রটোকল দিতে হবে। কারণ তারা এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অধিনের কমকর্তা বা কর্মচারী। গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের জন্য নির্বাচন না হয়ে ক্ষমতার চেয়ারের নির্বাচন বলে তারা প্রভার বিস্তার করতেই পারেন বা করবেন এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে পতনের মতো কোন আন্দোলন বিএনপি করতে পারে নি। গত প্রায় ৫ বছরে অনেক ইস্যু থাকলেও বিএনপি ছিলো নিশ্চুপ। সিটি নির্বাচনে জয় লাভ করা, হেফাজত, জাতায়াত ইসলামীর আন্দোলনে বিএনপির নেতারা উপলগ্ধি করছেন নির্বাচনে তারাই জয়লাভ করবে। নেতাদের অবস্থা এমন, যে দলের নমিনেশন পেলেই তো এমপি হচ্ছি। তবে কেন খামাখা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সরকারের দমন-পীড়নের মধ্যে মধে পড়ে জেলে যাবো। তাদের ধারণা আমি জেলে গেলে এমপি হবে কে? ফলে তারা আন্দোলনে যাচ্ছে না? এমনও অবস্থা হচ্ছে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ২/৩ দিন আগে গণমাধ্যমে ঘোষণা করতে হয়। নেতাদের মোবাইলে বা বাসায় পাওয়া যায় না। ফলে বেগম জিয়া আন্দোলন করবেন কাদের নিয়ে? এ অবস্থায় সরকার কি করবে? সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে সমঝোতা, না বাকী ১৭টি দল নিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। লেখক : স্কাউটার ও কলাম লেখক, ঢাকা, নাজমুল হক
মন্তব্য করুন