আমাদের পুলিশ সুপার মোঃ শাহ্জালালঃ  আমাদের পিরানে পীরের নামে নামঃ প্রশংসনীয় কাম

March 9, 2017,

মুজিবুর রহমান মুজিব এডভোকেট॥ বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিমান্তবর্তী বিভাগ বৃহত্তর সিলেট। প্রাচীন কালে আধুনিক বৃহত্তর সিলেট ১. লাউড়, ২. গৌড়, ৩. জৈন্তা, ৪. তরফ ও ৫. ইটা-এই পাঁচটি প্রধান সামন্তরাজ্যে বিভক্ত ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পিরানে পীর-বীর শাহজালাল ইয়েমেনী (রাঃ) গৌড়-রাজ-গোবিন্দকে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় নিশান উড়ান। কথা ছিল হযরত শাহজালালের সঙ্গে আনামাটির সঙ্গে যে মাটির মিল পাওয়া যাবে সেখানেই বসতি স্থাপন করবেন হযরত শাহ্জালালঃ ইয়েমেনী (রাঃ)। এই পিরানে পীরের সফর সঙ্গী মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ হযরত চাষনী পীর (রাঃ) উভয় মাটির পরিক্ষা করে মিল পাওয়াতে এখানেই হুজরা স্থাপন করেন। তখন থেকে পূন্য ভূমি সিল-হট-থেকে সিলেট এবং অতঃপর শাহজালালের নামানুসারে জালালাবাদ নামে অভিহিত হয়। সময়ের পরিবর্তনে সিলেট প্রশাসনিক স্থান-অবস্থান পরিবর্তন হলেও হযরত শাহজালালের মাজার এবং সিলেটি ঐতিহ্যবৃহত্তর সিলেটকে এক ও অভিন্ন করে রেখেছে।
বৃহত্তর সিলেটের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলীয় সিমান্তবর্তী জেলা মৌলভীবাজার। ১৮৮২ সাল তৎকালীন বৃটিশ সরকার প্রশাসনিক প্রয়োজনে এতদাঞ্চলকে নিয়ে সাউথ নিলেট সাব ডিভিশন-নামে একটি স্বতন্ত্র মহকুমা গঠন করেন। ১৯৬০ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম. আব্দুছ ছাত্তারের (পরে ডক্টর। সচিব। পরলোকে) কার্য্যকালে এই অঞ্চল মৌলভীবাজার মহকুমা নামধারন করে। ১৯৮২ সালে মহকুমার প্রশাসন জনগন সম্মিলিত ভাবে সাড়ম্ভরে মহকুমার শত বর্ষ পূর্তি উদযাপন করেন। শাহ মোস্তফা সড়কে এতদ সংক্রান্ত একটি স্মারক গেইট এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক আব্দুল মাহিদ খান-মাকা মিয়ার মালিকানাধীন প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-সাউথ সিলেট এন্ড কোম্পানী-ছাড়া আর কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই। সামরীক স্বৈরশাসক লেঃ জেঃ এইচ এম এর্শাদ সরকারামলে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরন কর্মসূচীর আওতায় মৌলভীবাজার মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয়। মহকুমার আমলে মহকুমা পুলিশ প্রধান এর পদবি ছিল সাবডিভিশননেল পুলিশ অফিসার এস.ডি.পি.ও.। জেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পর জেলা পুলিশের প্রধান-সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ-এসপি নামে অভিহিত ও পরিচিত। মহকুমা আমলে মহকুমা পুলিশ প্রধান একাত্তোরের বীর যোদ্ধা তেয়াত্তোর ব্যেচের দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লা খান শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গনে এখনও সুমন শহীদ হিসাবে সসম্মানে স্মরনীয় ব্যক্তিত্ব। সুদক্ষ ও সুদর্শন পুলিশ প্রশাসক জনাব খান একজন খ্যাতিমান মঞ্চ শিল্পী ছিলেন। জেলা আমলে জেলা পুলিশ সুপারদের মধ্যে একে. এম. সামসুদ্দিন, মাযহারুল ইসলাম, মকলিছুর রহমান তোফায়েল আহমদ প্রমুখের কথা এখনও সুধী মহলে আলোচিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আই. জি. পি জনাব এ. কে. এম. শহিদুল হক ইতিপূর্বে এই জেলায় দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার সাথে এ জেলার এস.পি. হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর কার্য্যকালে জেলা সদরে বৃহদাকারে-কমিউনিটি পুলিশের উপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন পুলিশ সুপার জনাব এ কে এম শহীদুল হক (বর্তমান আই জি পি) এর সভাপতিত্বে, তৎকালীন হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এর প্রধান আথিত্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা চক্রের কমিউনিটি পুলিশ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ ছিল সাংবাদিক ও আইনজীবী মুজিবুর রহমান মুজিবের।
মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ এর বদলির পর জেলা পুলিশ প্রধান পদে যোগদেন বর্তমান পুলিশ সুপার  মোঃ শাহ্জালালঃ। সাফ গুরিয়ানা-ফর্সা চেহারা। হ্যেন্ডসাম। স্মার্ট। বিনয়ী। মাঝারি উচ্চতা। পুলিশি বাজখাই-কড়া মেজাজিনন। বদ মেজাজিত ননই। কথা বলেন কম। শুনেন বেশি। এক চিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি লেগে আছে মুখে। প্রায় সব সময়ই। এ জেলার পুলিশ সুপারের গুরুত্বপূর্ণ পদে-গুরুদায়িত্বে থাকা কালেই তার পিতৃবিয়োগ হয়। এতিমহন তিনি। কর্ম্ম তৎপরতা-কর্ম চাঞ্চল্য হাসি আনন্দের মাঝে এই কষ্ট ও বেদনা বোধ তাঁকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। কষ্ট দেবে। একজন সহজ সরল সাদা মনের মানুষ মোঃ শাহ জালালের পিতৃবিয়োগে জেলাবাসি মর্মাহত হয়েছেন। জেলাজামে মসজিদ সহ বিভিন্ন মসজিদে তাঁর মরহুম পিতার রুহের মাগফিরাত এবং তার কর্মজীবনের সাফল্য সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আধুনিক মানব সভ্যতা ও মানব জাতি একটি আইনগত মৌলিক কাঠামোর উপর দাড়িয়ে আছে। দেশে দেশে আছে রাষ্ট্রীয় আইন আন্তর্জাতিক পর্য্যায় ও পরিমন্ডলে আছে রাষ্ট্র্র সমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনাইটেড ন্যেশন অর্গেনাইজেন-ইউ.এন.ও। আছে জাতি সংঘের সম্মিলিত বাহিনী। বিশ্বব্যাপী আইনের শাসনের কোন বিকল্প চিন্তাই করাযায় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা-ল-এনকোসিং এজেন্সি-হচ্ছেন পুলিশ। দিনকে দিন অস্বাভাবিক হারে জনসংখ্যাবৃদ্দি, দারিদ্র, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সামাজিক মূল্যবোধের মারাত্বক রকমের অবক্ষয়, নৈতিকতার নিদারুন ক্রমোবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও অশান্তি ইত্যকার বহুমাত্রিক কারনে দিনদিন অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা কম। হাতিয়ার ও যানবাহনের সংখ্যা ও অপ্রতুল। অপর পক্ষে অপরাধিগণ এখন আর শুধু মাত্রছিচকে চোর, ছেচ্চর, বাটপার, বাউন্ডেলনন, অপরাধি এখন শিক্ষিত, সুচতুর, স্যুটেড, বুটেড, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমেত প্রভাব-প্রতাপশালী ভিআইপি। এসব ভিআইপি সফেসটিকেইটেড ক্রিমিন্যালগনকে দমনে নিরহ নাগরিক সমাজের জানমালের নিরাপত্তার প্রয়োজনে একটি স্মার্ট, এ্যকটিভ, ইনটেলিজেন্ট, দূঃসাহসী পুলিশ বাহিনী ও জানবাজ পুলিশ প্রশাসকের বিকল্প নেই।
রাজনীতি, সাংবাদিকতা, পেশা ও সমাজ কর্মের কারনে বাল্য-কৈশের কালথেকেই রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা রক্ষার গুরু দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীও অধিনায়ক বৃন্দের সঙ্গে আমার পরিচয়-পথচলা, সুসম্পর্ক। সখ্যতাও হৃদ্যতা। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারি জীবনের সবচাহিতে গৌরব জনক অধ্যায়ন একাত্তোরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহনও জীবনদান। একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্স ফাইন্যাল এর ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকরি, সামরীক প্রশিক্ষন গ্রহন করতঃ রনাঙ্গনে যাই। তখন বয়স্ক, বুঝদার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও সামরীক কায়দা-কানুন-বন্দুক চালনা জানতাম না। তখন ঘরে ঘরে বন্দুক ছিল না। সে সময় একজন পুলিশ বাহিনীর এ এস আই পদ মর্য্যাদার পুলিশ কর্মকর্তার খুব কদর ছিল। কারন তিনি বন্দুক চালাতে যানেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজার বাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে আক্রমন করলে পুলিশ বাহিনীর অফিসার ও জোয়ানগণ জীবন ও চাকরির মায়া পরিত্যাগ করে পাকিস্তানের তথাকথিত অখন্ডতাও সংহতিতে পদাঘাত করে খানসেনাদের মোকাবিলা করেন, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। রাজারবাগের অনুসরনে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের থানা সমূহে বিদ্রোহ দেখাদেয়, বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন। জেলা পুলিশ সুপারের কার্য্যালয় ভবন পাশেই জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন। সিমানা সংক্রান্ত ব্যাপারে কিঞ্চিত মত পার্থক্যদেখা দিলে মনোমালিন্যের পর্য্যায়ে যায়নি। এস.পি. সাহেবের হস্তক্ষেপ ও আন্তরিকতায় তাৎক্ষনিক সম্মান জনক সমাধান হয়েছে। আমি নিজে ছয় মেয়াদে জেলা বারের সভাপতি সম্পাদক ছিলাম। দশকে একমেয়াদে এ জেলার পিপি ছিলাম। কাছে থেকে একে অন্যেকে দেখার-জানার সুযোগ হয়েছে। কোন ঝগড়া বিবাদ বিসম্ভ্রাদ মনোমালিন্য হয় নি। দীর্ঘ দিনযাবত আমি জেলা জামে মসজিদের সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। মসজিদ সংলগ্ন মসজিদের পরিচালনায় শাহ জালাল এবতেদায়ীও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং লিল্লাহ বোডিং অবস্থিত। মোঃ শাহজালাল সাহেবের পূর্বসূরী তোয়ায়েল আহমদ একদিন দুইবেলা দাওয়াত খাইয়ে দিলেন হাফিজিয়া মাদ্রাসার তালবে ইলিমগনকে। মাদ্রাসার পারপরমেন্স ও ফলাফলে তিনি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। মাদ্রাসা মসজিদ এবং এসপি সাহেবের অফিসের মধ্যে বিশাল সিমানা প্রাচীর এবং একে অন্যের নিকট প্রতিবেশি হলেও কোনিদিন কোন মত পার্থক্য মনোমালিন্য হয়নি। এবং তোফায়েল আহমদ সাহেব এরমত বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ শাহ জালাল ও সংবেদনশীল। মহানুভুতিশীল। হৃদয়বান ও বিবেকবান। তার শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ ও বিনয়াচরনে মসজিদ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমরা বিমুগ্ধ। বিমোহিত।
একজন সুদক্ষ পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালাল জেলার আইন শংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রধান হিসাবে সকাল বিকাল নটা পাঁচটা দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই তার কর্তব্য ও কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখেন নি, বরং চব্বিশ ঘন্টা দিবা-রাত্রিই ছিল তার কর্তব্য মহাকাব্য। বন্ধের দিন দপ্তর বন্ধ হলেও তার মোবাইল ও বাস ভবনের সদর দরজা জনগণের জন্য উন্মুক্ত। জেলা পুলিশ সুপারের বড় পদটিকে তিনি শোকেশের শোপিস-করে রাখেন নি, বরং জনগনের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। নিবেদন করেছেন। তাঁর কর্ম্মকালে তার উন্নত নৈতিকতাবোধ-কর্তব্যনিষ্টা, কর্মতৎপরতা ও দেশপ্রেম জেলার বোদ্ধা-বুদ্ধজীবী-মিডিয়া ও সুশীল সমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। গুন্ডা-পান্ডা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইউ পি নির্বাচন সমূহে কিছু গ্রামীন হাঙ্গামা হৈ হোল্লুড় শৈল্পিক সন্ত্রাস হয়েই যায়। হয়ে যেত। নির্বাচনী মামলা মোকদ্দমা হত। বিগত ইউ পি নির্বাচনে তা হয়নি। ফলাফল বাতিলের মামলা মোকদ্দমাও হয়নি। একজন আদর্শ পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালালের আইন শৃংখলা রক্ষা এবং নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ড কোটি কোটি টাকার জুয়া ও নগ্ননৃত্য রুখেদেয়া একটি ঐতিহাসিক ও প্রশংসনীয় কাজ। সেরপুরের শত শত বর্ষী ঐতিহ্যবাহী মাছের বাজার-মাছের মেলা হাল আমলে জুয়ার বাজারও বেটির বাজারে পরিনত হয়েছিল। পথেঘাটে প্রকাশ্যে জুয়ার দান, জুয়ারীদের উদ্ভিন্ন উল্লাস আর নগ্ন বালিকাদের নৃত্যের নামে দেহ প্রদর্শনী ও লারেলাপ্পা লাফালাফি, যৎকিঞ্চিত লাল পানি পান আর শুকনা সেবন করে অশ্লীল আস্ফালনে মেতে উঠতেন জুয়ারীও নারী লোভী নরপশু ও দালালগণ। সেরপুর মাছের মেলায় এসব ছিল ওপেন সিক্রেট। ঐতিহ্য ও মায়ের জন্য বাগমাছ কেনার কারনে আমি ছিলাম ও আছি মাছের মেলার মিডিয়াম্যান সর্বোপরি একজন ধর্মপ্রান মুসলমান হিসাবে প্রায় প্রত্যেক বৎসর ঘটনাস্থল মাছের মেলায়ই ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া মতামত দিয়ে দাবী জানাতাম। ঐতিহ্যবাহী মাছের বাজার মরে গেছে হয়ে গেছে জুয়ার বাজার সুরা আর নারীর বাজার। কিন্তু এ বলাই ছিল সার। কোন কাজ হতনা। আমরাও আমাদের দায়িত্ব পালন করতাম। এবারের মাছের মেলা ছিল বিগত জেলা সমূহের ব্যতিক্রম। নারী সুরা মদ জুয়া ছাড়া এবারের মাছের বাজার ছিল প্রকৃত অর্থেই মাছের মেলা। লাখো লাখো চলো লোকজন ও দোকান পাঠের মাঝেও আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ছিল উন্নত ও নিয়ন্ত্রনে বেআইনী কিছুর বালাই ছিল না। জেলা ম্যাজিস্ট্রেসির সহযোগিতায় জেলা পুলিশের প্রধান মোঃ শাহজালালের কঠোর অবস্থানের কারনে শেরপুর মাছের জেলা তার ঐতিহ্য ফিরে পেল। আমি কমাস যাবত ডান পা ভেঙ্গে শয্যাশায়ী থেকে সোফাশায়ী । বন্ধুবর এসটি করিম আমাকে নিয়ে গেলেন মেলায়। মেলায় গেলেই হল। কারন সেখানে এবং এ জেলার প্রায় সর্বত্রই আমার পরিচিত ও প্রিয় জন আছেন। তারাই দেখভাল করেন। মেলাঘিরে এই বিশাল সমাবেশ ও শন্তি শৃংখলা দেখে প্রশংসা করলাম। আমি আমরা অবাক তাজ্জুব না হয়ে খুশী হলাম আর মনে মনে তাৎক্ষনিক ভাবে পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালালকে ধন্যবাদ জানালাম। পীরানে পীর হযরত শাহজালাল এর জমিনের পবিত্রতা রক্ষা করা পুলিশ সুপার মোঃ শাহ জালাল এর পবিত্র দায়িত্ব। আমার শুভাগমনের পর একটি সভায় তার সঙ্গে সাক্ষাত সেই সভার আমন্ত্রিত বক্তা ছিলাম। তার অপূর্ব সুন্দর চেহারা মিহি সুরে মিষ্টি বয়ান গুনে কথায় বার্তায় তাকে আমার বেশ মনে ধরল। জেলার প্রবীন নাগরিক হিসাবে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন সেই পীরে কামেলের স্মৃতি বিজড়িত পূন্যভুমি সিলেটে শাহজালালের জালালাবাদে-আপনার দায়িত্ব অত্যাধিক। বলেছিলাম আমি আশা করি আপনি শাহজালালের পূণ্য ভূমির মানসম্মান রক্ষাই নয়-বৃদ্ধি করবেন। তাঁর এযাবত কালের কার্য্যক্রম দেখে মনে হল এ ব্যাপারে তিনি শত করা একশত ভাগ সচেতন ও দায়িত্ববান। এই সময় হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা শেরে সওয়ার চাবুকমার বোগদাদীর বার্ষীক ওরশ শরীফ হয়ে গেল। একদিনের ওরশ হলেও এখানে অর্ধ সপ্তাহ ব্যাপী মেলাবসে। লক্ষ লক্ষ লোকের-আশেকান-ব্যবসায়ীদোকানীর সমাবেশ ঘটে। এখানে আমি নিজে একবার আইন শৃংখলা কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে হকমৌলা মার্কা গঞ্জিকাসেবী-অল্পবয়স্কা ভন্ডী পিরানীর প্রাদূর্ভাব নেই। প্রশ্রয় দেয়া হয় না। ওরসে ওয়াজ-মিলাদ-জিখির-জিয়ারত হয়। বিশাল শিরনী হয়। লক্ষ লোকের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশি নজর দারিতে রাখতে হয়। জেলা পুলিশ দিবারাত্রি কষ্ট সহকারে হাসি মুখে এগুরু দায়িত্ব পালন করেন। এখানেও পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালালের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক আন্তরিক। হৃদয়বান। সহানুভুতিশীল।
একজন পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালাল ইতিপূর্বে কালেঙ্গা এলাকায় একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। কালেঙ্গা মার্ডারকে কেন্দ্র করে পুলিশ পাবলিকের সম্পর্কে ফাটল ধরে। উত্তেজনা ছাড়িয়ে পড়ে। দেশের অন্য কোন স্থানের মত পুলিশ-পবলিক দাঙ্গা লাগার আলামত দেখেই তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ জালাল ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় পরিস্থিতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে নেন। সৃষ্ট সমস্যা ও সংকটের শান্তিপূর্ন সমাধান দেন। উত্তেজনা প্রশমিত হয়। কালেঙ্গা এলাকায় পূনঃ শান্তির সুবাতাস বইতে তাকে। শক্তিশালি জাতি গঠন, উন্নত সমাজ বিনির্মান এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রশাসন একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। একটি রাজনৈতিক সরকারের-সংসদের বয়স মাত্র পাঁচ বৎসর। কিন্তু একজন প্রশাসক-কর্মকর্তার সময় কার্য্যকাল যোগদানের তারিখ থেকে এল.পি.আর. পর্য্যন্ত অনেক লম্বা সময়। চাকরি জীবনের এই সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় একজন সরকারি কর্মকর্তা একজন পুলিশ অফিসার দেশ ও জাতির খেদমত-কাজ করার সুযোগ পান। অনেকে করেনও। কতেক অসৎ ও অযোগ্য কর্ম্মকর্তার কারনে সরকারি কর্মকর্তাদের ঐতিহ্য-সুনাম-মান সম্মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কতেক অসৎ ও অদক্ষ কর্মকর্তা ঘিরে একটি নন অফিসিয়াল ধুমপাবিলিক দালাল চক্র গড়ে উঠে যারা হাই লেভেলে হটলাইনের বড়াই করে বড় সাহেবদেরকে স্পীডমানি দেয়ার নাম করে নিরিহ জনগনের নিকট থেকে টাকা পয়সা আদায় করে নিজেরাই আত্বসাত করে। দালাল-টাউট-বাটপার-চাপাবাজ-ধান্দাবাজ হিসাবে পরিচিত এসব কুলাঙ্গার-কমিনগনই দেশও জাতির শত্রু-সরকারি কর্ম্মকর্তাদেরও দুষমন। এরা সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের আখের গোচিয়ে ফকির থেকে আমীর হয়। জেলাবাসির আশা ও আনন্দের কথা আমাদের পুলিশসুপার মোঃ শাহজালাল এ ব্যাপারে খুবই সজাগ ও সতর্ক। তার আশেপাশে এসব রক্তচোষা কাকলাশের দল নেই। দেখাযায়নি। ইনশাআল্লাহ দেখা যাবেও না।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম সাহেবের একটি মহৎ কর্মের প্রশংসা করে একটি কলাম লিখেছিলাম-একজন জেলা প্রশাসকের মহৎ মানষিকতা না আমলাতন্ত্র না আমলাতান্ত্রিক মানষিকতা। লেখাটি কলাম আকারে জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় দৈনিক সমূহে প্রকাশের পর পাঠক প্রিয়তা পায়। প্রশংসিত হই। এই জাতীয় মানবিক হৃদয় বৃত্তিক রচনা লেখার অনুরোধ পাই। এ লেখা-লেখার মাঝে আমার প্রিয়বন্ধু, জেলা বারের সাবেক সভাপতি, জেলার প্রবীনতম আইনজীবী আলহাজ্ব তজম্মুল হোসেন হৃদরুগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক ভাবে ইন্তিকাল করেন। জেলা জামে মসজিদের দক্ষিনাংশে পাশাপাশি দুই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতাম। আর কোন দিন এ চেয়ারে বসে আর নামাজ আদায় করবেন না তজমুল হোসেন বন্ধু বরেষু। আবেগ আপ্লুত হই। খেই হারিয়ে যায়। বেদনাহত হই প্রিয় বন্ধুর চীর বিদায়ে। তাই ইয়ত লেখাটি এলোমেলো হয়ে গেল। প্রিয় পাঠক মাফ চাওয়া ছাড়া আমার আর কি করার আছে। প্রিয় বন্ধু তজম্মুল হোসেনের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাফাই ধোলাই কোন কলামিষ্টের কাজ নয়। একজন কলামিষ্ট-কলম সৈনিকের কাজ সত্য প্রকাশ করা। একজন গুনীজন-কৃতিপূরুষের প্রশংসা করা সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সামাজিক মূল্যবোধের মারাত্মক রকমের অবক্ষয় নৈতিকতার নিদারুন ক্রমোবনতি, স্পীড মানি ও ভ্রষ্টাচারের জোয়ারের মাঝেও একজন সহজ সরল সাদামনের মানুষ, একজন কর্ম চঞ্চল কর্ম্ম তৎপর মোঃ শাহজালালের কর্তব্যনিষ্টাও কর্তব্য পরায়নতা নিঃসন্দেহেই প্রশংসনীয়। অনুকরনীয়। অনুসরনীয়। তাই নিঃসন্দেহেই চলাচলে একজন পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালাল পীরানে পীর বীর শাহজালালের স্মৃতি বিজড়িত পূন্য ভূমি জালালাবাদে এসে পীরের নামের বদনাম করেন নি, বরং সুনাম বাড়িয়েছেন। তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে হয়। জেলার আইন শৃংখলার রক্ষা ও উন্নত করনে নৈতিক সমর্থন দিতেই হই।
(সেক্রেটারী, মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ। সিনিওর এডভোকেট, হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট)

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com