ফলোআপ : চা পাতা আত্মসাতের ঘটনায় জেলা জুড়ে তোলপাড় : বাগানের দুই ব্যবস্থাপক ৩ দিনের রিমান্ডে : ম্যানেজারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ
কুলাউড়া উপজেলায় চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ম্যানেজার শফিকুলের বিরুদ্ধে রাজনগর চা-বাগানের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগানের ৫৩ লক্ষ টাকার চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে বাগানের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানা পুিলশ। রাজনগর চা-বাগান সু্েত্র জানা যায়, ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বিগত দুই বছর রাজনগর চা-বাগানে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও টাকা আত্মসাৎ চা-পাতা পাচার এর অভিযোগে তাকে বিগত ১৬ মে ২০১৩ তারিখে ম্যানেজার এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাগান কর্তৃপক্ষ ও বাগানের একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, শফিকুল, বাগান স্টাফ সায়েদ মিয়া, টিলা বাবু আপ্তাব উদ্দিন, বিপিন বাবুসহ এদের যোগ সাজসে উৎপাদন কম দেখিয়ে চা-পাতা পাচার, খাতা কলমে শ্রমিকদের হাজিরা বেশি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বাগানের রাস্তাঘাট মেরামত ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ তাদের অনুগতদের মাধ্যমে সম্পন্ন করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা উৎকোচের বিনিময়ে ভূয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণেরও অভিযোগ ওঠে। সে সময় রাজনগর চা বাগানের শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে রাজনগর চা-বাগান থেকে চাকুরী ছাড়ত হয় তাকে। এ পর শফিকুল ইসলাম কুলাউড়ার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগানে ম্যানেজার হিসাবে সম্প্রতি যোগদান করেন। যোগদনের পর থেকে তার নানা অসংগতি ধরা পড়ে গত ০২ সেপ্টেম্বর চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে বাগানের প্রশাসনিক র্কমর্কতা রেজাউল করিম ও স্টোর র্ক্লাক সুদীপ চক্রর্বতীর দায়ের করা পৃথক ২টি মামলার প্রেক্ষিতে বাগানের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানকে বাগান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার তাদের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দুটি হয়েছিল। বাগান ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা হামিম গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান কুলাউড়া উপজেলার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগান থেকে ৫৩ লাখ টাকার (১৪ হাজার ২৭৩ কেজি) চা পাতা দুই চালানে চট্টগ্রামের ওয়ার হাউজে অকশনে বিক্রির কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ আগস্ট চা পাতা চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে গাড়িসহ চা পাতা উধাও হয়। এতে বাগান কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও স্টোর র্ক্লাক সুদীপ চক্রর্বতীর সন্দেহ হয় উধাও হওয়া চা পাতা ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজার আত্মসাৎ করেছেন। এতে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে । হা-মীম গুপের মালিকাণাধীন কুলাউড়ার লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগানের বিপুল পরিমান চা পাতা আত্মসাতের ঘটনার অন্তরালের খবর । এ নিয়ে চা বাগান অধ্যুষিত এ জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আত্মসাৎকৃত মালামাল কিংবা মালামাল বিক্রির টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। প্রায় ১৪ হাজার কেজি চা পাতা চুরি ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবস্থাপক, সহকারীর ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বাগান কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত একটি মামলায় পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাগান ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেফতারকৃত অপর হলিছড়া ডিবিশনের সহকারি ব্যবস্থাপক কোহিনূর আলম চুরি ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে গত মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ এ জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সুত্র জানায়, গত ২৬ আগস্ট কুলাউড়ার লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও তার অনুগত দুই সহকারি ব্যবস্থাপকের যোগসাজশে চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে চা-পাতার চালান পাঠানোর নাম করে শ্রীমঙ্গলে বিক্রি করে দেন। ঢাকা মেট্টো ০৫ ০০৪৪ নং ট্রাকে এই চালান পাঠানো হয়। গত ২৯ আগস্ট পরবর্তী চালান পাঠানোর সময় ২২ নং চালানের ডকুমেন্ট চালান বইতে লিপিবদ্ধ না থাকা এবং একটি পাতা ছিড়ে ফেলা দেখে ফ্যাক্টরির দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি ব্যবস্থাপক কোহিনূর আলম এ বিষয়টি ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। তখন ব্যবস্থাপক চালান বই নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চলে যান। এরপর কম্পিউটারে প্রিন্ট করা সাদা একটি পাতা চালান বহিতে গাম দিয়ে সংযুক্ত করে ফ্যাক্টরির দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন। তখন এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে ফ্যাক্টরি ও বাগান এলাকার লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। এরপর চা বাগানের সংশিষ্ট এক ব্যক্তি গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে যোগাযোগ করলে ১৮ ও ২৬ আগস্টে পাঠানো লুয়াইউনি বাগানের কোন চালান সেখানে যায়নি বলে জানানো হয়। এতে ফাঁস হয়ে যায় দুই চালানে ১৪ হাজার ৮শত ৯৮ কেজি চাপাতা আত্মসাতের ঘটনা। আত্মসাৎ ও চুরি যাওয়া চা পাতার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫৩ লাখ টাকা। এ বিষয়টি তখন মালিকপক্ষকে জানানো হয়। মালিকপক্ষ আত্মসাৎ ও চুরির বিষয় দুইটি নিশ্চিত হয়ে এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। সুদীপ চক্তবর্তী দায়েরকৃত প্রথম মামলায় ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম (৪১), সহকারি ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান (২৯) ও কোহিনূর আলম (২৮) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। অপর মামলায় পূর্ববর্তী মামলার প্রধান দুই আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলার বাদী হন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম । এরপর কুলাউড়া থানা পুলিশ ঢাকার তেজগাঁও থেকে ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট চা বাগান এলাকা থেকে বাকী দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। প্রথম মামলার আসামি কোহিনূর আলম ব্যবস্থাপকের নির্দেশে দুই বারে প্রায় ১৩ হাজার ৮৯৮ কেজি চাপাতা আত্মসাতের ঘটনা স্বীকার করে গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকাররোক্তি মুলক বক্ত্য দিয়েছেন। ব্যবস্থাপক তাদের তিনজনকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এই মামলার বাকী দুই আসামির রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বুধবার শুনানি শেষে আদালত দুই জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ সুত্রে আরো জানা যায়, লুয়াইউনি-হলিছড়া বাগানে কাচা চা-পাতা বেশী উঠানোর কারনে নিজেদের ফ্যাক্টরিতে সব পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব না হওয়ায় নিকটবর্তী হাজীনগর বাগানে প্রায় ২৭ হাজার কেজি কাচা পাতা (গ্রিন লিফ) প্রক্রিয়ার জন্য দেন কর্তৃপক্ষ। গ্রিনলিফ থেকে ৬ হাজার ২৭৩ কেজি বিক্রিযোগ্য চাপাতা তৈরী হয়। হাজীনগর চা বাগান থেকে গেটপাসের মাধ্যমে ঢাকা-৬১১৫৭ নং ট্রাকে গত ১৮ আগস্ট এই চাপাতা চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে পাঠানোর নাম করে লুয়াইউনি বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারি ব্যবস্থাপক একটি চক্রের কাছে শ্রীমঙ্গলে চাপাতা বিক্রি করে দেন। ব্যবস্থাপকের নির্দেশক্রমে আজিজ নামে এক ব্যক্তির সাথে ট্রাক চালক ও ম্যাসেঞ্জার শ্রীমঙ্গলে যোগাযোগ করে চা-পাতা হস্তান্তর করেন। বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়মিত যে সব ম্যাসেঞ্জার চা-পাতার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম যায় তাদেরকে ২১ ও ২২ নং চালান পাঠানোর সময় সঙ্গে দেননি ব্যবস্থাপক । এই সময় ফ্যাক্টরী বাবু আব্দুল হক ছুটিতে থাকায় কোহিনূর আলম ফ্যাক্টরির দায়িত্বে ছিলেন। কুলাউড়া থানা ওসি (তদন্ত) দিলীপ ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নাজমূল ইসলাম জানান, একটি মামলায় ব্যবস্থাপকসহ দুইজনের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। অপর মামলার শুনানী আগামী রোববার হবে। আসামীদের রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মালামাল উদ্ধার ও আরো কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত আছে তা বেরিয়ে আসবে। মালামাল উদ্ধারে পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলায় চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ম্যানেজার শফিকুলের বিরুদ্ধে রাজনগর চা-বাগানের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগানের ৫৩ লক্ষ টাকার চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে বাগানের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানা পুিলশ। রাজনগর চা-বাগান সু্েত্র জানা যায়, ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বিগত দুই বছর রাজনগর চা-বাগানে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও টাকা আত্মসাৎ চা-পাতা পাচার এর অভিযোগে তাকে বিগত ১৬ মে ২০১৩ তারিখে ম্যানেজার এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাগান কর্তৃপক্ষ ও বাগানের একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, শফিকুল, বাগান স্টাফ সায়েদ মিয়া, টিলা বাবু আপ্তাব উদ্দিন, বিপিন বাবুসহ এদের যোগ সাজসে উৎপাদন কম দেখিয়ে চা-পাতা পাচার, খাতা কলমে শ্রমিকদের হাজিরা বেশি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বাগানের রাস্তাঘাট মেরামত ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ তাদের অনুগতদের মাধ্যমে সম্পন্ন করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা উৎকোচের বিনিময়ে ভূয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণেরও অভিযোগ ওঠে। সে সময় রাজনগর চা বাগানের শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে রাজনগর চা-বাগান থেকে চাকুরী ছাড়ত হয় তাকে। এ পর শফিকুল ইসলাম কুলাউড়ার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগানে ম্যানেজার হিসাবে সম্প্রতি যোগদান করেন। যোগদনের পর থেকে তার নানা অসংগতি ধরা পড়ে গত ০২ সেপ্টেম্বর চা পাতা আত্মসাতের অভিযোগে বাগানের প্রশাসনিক র্কমর্কতা রেজাউল করিম ও স্টোর র্ক্লাক সুদীপ চক্রর্বতীর দায়ের করা পৃথক ২টি মামলার প্রেক্ষিতে বাগানের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানকে বাগান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার তাদের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দুটি হয়েছিল। বাগান ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা হামিম গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান কুলাউড়া উপজেলার লোহাইনি হলিচড়া চা বাগান থেকে ৫৩ লাখ টাকার (১৪ হাজার ২৭৩ কেজি) চা পাতা দুই চালানে চট্টগ্রামের ওয়ার হাউজে অকশনে বিক্রির কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ আগস্ট চা পাতা চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে গাড়িসহ চা পাতা উধাও হয়। এতে বাগান কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও স্টোর র্ক্লাক সুদীপ চক্রর্বতীর সন্দেহ হয় উধাও হওয়া চা পাতা ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজার আত্মসাৎ করেছেন। এতে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে । হা-মীম গুপের মালিকাণাধীন কুলাউড়ার লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগানের বিপুল পরিমান চা পাতা আত্মসাতের ঘটনার অন্তরালের খবর । এ নিয়ে চা বাগান অধ্যুষিত এ জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আত্মসাৎকৃত মালামাল কিংবা মালামাল বিক্রির টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। প্রায় ১৪ হাজার কেজি চা পাতা চুরি ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবস্থাপক, সহকারীর ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বাগান কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত একটি মামলায় পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাগান ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার মেহেদী হাসানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেফতারকৃত অপর হলিছড়া ডিবিশনের সহকারি ব্যবস্থাপক কোহিনূর আলম চুরি ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে গত মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ এ জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সুত্র জানায়, গত ২৬ আগস্ট কুলাউড়ার লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও তার অনুগত দুই সহকারি ব্যবস্থাপকের যোগসাজশে চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে চা-পাতার চালান পাঠানোর নাম করে শ্রীমঙ্গলে বিক্রি করে দেন। ঢাকা মেট্টো ০৫ ০০৪৪ নং ট্রাকে এই চালান পাঠানো হয়। গত ২৯ আগস্ট পরবর্তী চালান পাঠানোর সময় ২২ নং চালানের ডকুমেন্ট চালান বইতে লিপিবদ্ধ না থাকা এবং একটি পাতা ছিড়ে ফেলা দেখে ফ্যাক্টরির দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি ব্যবস্থাপক কোহিনূর আলম এ বিষয়টি ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। তখন ব্যবস্থাপক চালান বই নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চলে যান। এরপর কম্পিউটারে প্রিন্ট করা সাদা একটি পাতা চালান বহিতে গাম দিয়ে সংযুক্ত করে ফ্যাক্টরির দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন। তখন এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে ফ্যাক্টরি ও বাগান এলাকার লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। এরপর চা বাগানের সংশিষ্ট এক ব্যক্তি গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে যোগাযোগ করলে ১৮ ও ২৬ আগস্টে পাঠানো লুয়াইউনি বাগানের কোন চালান সেখানে যায়নি বলে জানানো হয়। এতে ফাঁস হয়ে যায় দুই চালানে ১৪ হাজার ৮শত ৯৮ কেজি চাপাতা আত্মসাতের ঘটনা। আত্মসাৎ ও চুরি যাওয়া চা পাতার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫৩ লাখ টাকা। এ বিষয়টি তখন মালিকপক্ষকে জানানো হয়। মালিকপক্ষ আত্মসাৎ ও চুরির বিষয় দুইটি নিশ্চিত হয়ে এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। সুদীপ চক্তবর্তী দায়েরকৃত প্রথম মামলায় ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম (৪১), সহকারি ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান (২৯) ও কোহিনূর আলম (২৮) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। অপর মামলায় পূর্ববর্তী মামলার প্রধান দুই আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলার বাদী হন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম । এরপর কুলাউড়া থানা পুলিশ ঢাকার তেজগাঁও থেকে ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট চা বাগান এলাকা থেকে বাকী দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। প্রথম মামলার আসামি কোহিনূর আলম ব্যবস্থাপকের নির্দেশে দুই বারে প্রায় ১৩ হাজার ৮৯৮ কেজি চাপাতা আত্মসাতের ঘটনা স্বীকার করে গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকাররোক্তি মুলক বক্ত্য দিয়েছেন। ব্যবস্থাপক তাদের তিনজনকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এই মামলার বাকী দুই আসামির রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বুধবার শুনানি শেষে আদালত দুই জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। লুয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ সুত্রে আরো জানা যায়, লুয়াইউনি-হলিছড়া বাগানে কাচা চা-পাতা বেশী উঠানোর কারনে নিজেদের ফ্যাক্টরিতে সব পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব না হওয়ায় নিকটবর্তী হাজীনগর বাগানে প্রায় ২৭ হাজার কেজি কাচা পাতা (গ্রিন লিফ) প্রক্রিয়ার জন্য দেন কর্তৃপক্ষ। গ্রিনলিফ থেকে ৬ হাজার ২৭৩ কেজি বিক্রিযোগ্য চাপাতা তৈরী হয়। হাজীনগর চা বাগান থেকে গেটপাসের মাধ্যমে ঢাকা-৬১১৫৭ নং ট্রাকে গত ১৮ আগস্ট এই চাপাতা চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে পাঠানোর নাম করে লুয়াইউনি বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারি ব্যবস্থাপক একটি চক্রের কাছে শ্রীমঙ্গলে চাপাতা বিক্রি করে দেন। ব্যবস্থাপকের নির্দেশক্রমে আজিজ নামে এক ব্যক্তির সাথে ট্রাক চালক ও ম্যাসেঞ্জার শ্রীমঙ্গলে যোগাযোগ করে চা-পাতা হস্তান্তর করেন। বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়মিত যে সব ম্যাসেঞ্জার চা-পাতার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম যায় তাদেরকে ২১ ও ২২ নং চালান পাঠানোর সময় সঙ্গে দেননি ব্যবস্থাপক । এই সময় ফ্যাক্টরী বাবু আব্দুল হক ছুটিতে থাকায় কোহিনূর আলম ফ্যাক্টরির দায়িত্বে ছিলেন। কুলাউড়া থানা ওসি (তদন্ত) দিলীপ ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নাজমূল ইসলাম জানান, একটি মামলায় ব্যবস্থাপকসহ দুইজনের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। অপর মামলার শুনানী আগামী রোববার হবে। আসামীদের রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মালামাল উদ্ধার ও আরো কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত আছে তা বেরিয়ে আসবে। মালামাল উদ্ধারে পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কুলাউড়া অফিস॥
মন্তব্য করুন