শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন বাস্তব চিন্তা, পরিকল্পনা, অবকাঠামো, উদ্যোগ ও অঙ্গীকার
মোঃ সিরাজুল ইসলাম॥ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ইং শুক্রবার শ্রীমঙ্গল শহরে উদ্বোধন হয় বাংঙ্গালীর ইতিহাসে এই অঞ্চলের সর্ব প্রথম চা নিলাম কেন্দ্র। আর ১৪ মে ২০১৮ ইং আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে এই নিলাম কেন্দ্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা বাস্তবায়নে উদ্বোধনী সভার প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থ মন্ত্রী আবু মাল আব্দুল মুহিত, উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দ। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নেতৃবৃন্দসহ মিডিয়ার কর্মীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন, বাবু জহর তরফদার।
দেশে ১৬৯টি চা বাগানের মধ্যে ১৪৭টি বৃহত্তর সিলেটে, ২২টি চট্রগ্রামে অবস্থিত। এদের মধ্যে ৪৪টি চা বাগান-সিক হিসাবে পরিগনিত। পরিতাপের বিষয় ১৪৭টি চা বাগান থাকার পরেও শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র নেই। অতচ ২২টি চা বাগান থাকার পরেও চট্রগ্রামে ১৯৪৮ সন থেকে চা নিলাম কেন্দ্র কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এদেশের মালিক শ্রমিক কর্মচারীগন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চা উৎপাদন করছেন। কিন্তু বিক্রয় বাজার আমাদের হাতে নেই। অতচ এটা চট্রগ্রামে অবস্থিত। শুরুতে শ্রদ্ধা জানাতে হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কারণ ১৯৫৭-৫৮ তিনিই ছিলেন বাঙ্গালীর ইতিহাসের সর্ব প্রথম টি বোর্ডের চেয়ারম্যান “হে পিতা ডিসেম্বরের এই দিনে আমরা সবাই তোমাকে স্মরন করছি” তোমার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত।
বাংলার চায়ের ইতিহাসে ১৬৩ বছরের ইতিহাস। ১৮৫৪ সনে প্রথম সিলেটে মালনি ছড়া চা বাগান স্থাপিত হয়। ১৮৬০ সনে মৌলভীবাজার মির্তিংগা চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে আজো অবদি ভিন্ন জায়গায় যেমন পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাটের নীলফামারিতে চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ও হবে। এ ব্যবসা বেশি লাভ না হলেও রাজকীয় ব্যবসা হিসাবে দেশ বিদেশে খ্যাত। চা বাগান মালিকগন (ভিআইপি) ও (সিআইপি)।
বৃহদায়তন আকারের ভূমি নিয়ে লাখো মানুষসহ ব্যবসা করেন বলে দেশে বিদেশে সম্মানিত হন তারা। চা উৎপাদনে ২০১৬ সাল রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিল। উৎপাদনের পরিমান ছিল ৮৫ মিলিয়ন কেজি। বাংলাদেশ সর্বচ্ছো রেকর্ড ২০১৭ সালে র্টাগেট ছিল ১১০ মিলিয়ন কেজি উৎপাদন করে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু বিধি বাম, অতি বৃষ্টির কারনে ১৫% কম উৎপাদিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে Tea is an agrobased industy. তাই প্রকৃতির সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন। অন্য দিকে চায়ের হোম কনজামশন বাড়ছে। এদেশেই প্রয়োজন প্রায় ৮০ মিলিয়ন কেজি। শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় চায়ের রাজধানী। কিন্তু রাজধানীর রাজা প্রজা ও মন্ত্রী সহ চা পান করেন চট্রগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র থেকে ক্রয় করে এনে। মৌলভীবাজার কে বলা হয় চায়ের দেশ । কিন্তু এ দেশে থেকে চা দেশ বিদেশে যায় চট্রগ্রাম নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ।
শ্রীমঙ্গল চা উৎপাদন করে। কিন্তু আর্থিক সুবিধা ভোগ করে অন্যরা। চায়ের রাজধানী মূল বাসিন্দা হিসাবে চা বাগানের মালিক মাত্র চার পাঁচ জন। অন্য সবাই অন্য জেলার এমন কি বিদেশেরও। যেমন শ্রীমঙ্গলের আশে পাশে জেমস ফিনলে কোং চা বাগান সা¤্রাজ্য । শ্রীমঙ্গল সহ আশ পাশের ডানকান ব্রাদার্স কোম্পানির চা বাগান রাজত্ব। শ্রীমঙ্গল সহ আশ পাশে এম আহমেদ চা কোম্পানির বহু চা বাগান। এছাড়া ইস্পাহানি কোম্পানি চা বাগান ও প্যাকেট করন কারখানা। মিসেস লায়লা কবির ও মিস্টার আরদাসির কবিরের চা বাগান। মেয়র মহসিন মিয়ার চা বাগান। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহেব গংদের এম আর খান সহ বহু চা বাগান।
জুলেখা নগর চা বাগানের সনামধন্য মালিক (মহিলা), সিটি গ্রুপের টি কোং মালিক, বিশ্বখ্যাত আল হারামাইন পারফিউম গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আল হারামাইন হাসপাতাল প্রাইভেট লি: এবং চা শিল্পের সৃষ্টিকারি হামিদিয়া টি এস্টেট”। এছাড়া আরো অনেকে আছেন, আসতে চাইছেন এবং আসতে আগ্রহী এরা অর্থ বিত্ত ও রুচিশীল। এরা ধর্ণাঢ্য দানবীর এদেরকে আসতে দিন। চায়ের রাজধানীর রাজা হিসাবে আছেন, বি,টি,আর,আই এবং পি,ডি.ইউ সম্মানিত ডাইরেক্টর। আর চায়ের দেশ তথা চা শিল্পের রাজা বাংলাদেশ টি র্বোডের সম্মানিত চেয়ারম্যান (শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধিনে)। মৌলভীভাজার জেলা আছে ৯২টি চা বাগান । শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, কুলাউড়া, জুড়ী. কমলগঞ্জ, রাজনগর, সিলেট, হবিগঞ্জসহ সকল চা বাগানকে ডমিনেট করছে শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজার।
কিন্তু এখানে চা নিলাম কেন্দ্র নেই। সুতরাং শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্র উন্মোচিত হলো এটা দীর্ঘ স্বপ্নের বাস্তবতা। এটা আরো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ২০০৯ সালে চট্রগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার ইনিষ্টিটিউটের এক সভায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী মাননীয় দিলিপ বড়–য়া মহোদয়কে আমি শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে প্রস্তাব রেখেছিলাম। তৎপূর্বে এবং চা শিল্পের মাননীয় শ্রদ্ধেয় মালিক বিসিএস, বিটিএ, বিটিটিএ, সাংবাদিকসহ সকল মহল সরকারের কাছে দাবি তুলেছিল। আজ তা বাস্তবায়িত হল। সৃষ্টি হল চা নিলামের মাইল ফলক। চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে অবকাঠোমো নির্মাণে শ্রীমঙ্গল চট্রগ্রাম থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে। এখানে প্রচুর উঁচু জমি আছে। সড়কপথ, রেলপথ, হাওরপথ রয়েছে উড়ো জাহাজের ঘাঁটিও। গোদাম ওয়্যারহাউজ নির্মাণের অথবা ভাড়া নেওয়ার জন্য জুতসই উঁচু বর্ষাকালে নিরাপদ গোদাম, বাসা বাড়ি বহুতল দালান পাওয়া যাবে।
ব্যবস্থাপক সব কিছুই পরিমিত খরচে মিলবে। কারন শ্রীমঙ্গলের মাটি চা বাগানের ঘাঁটি। এখানে নিরাপত্তা মিলবে। বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা উপজেলা সব ধরনের মানুষ শ্রীমঙ্গলে বাস করছেন, ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। এখানে দেশি বিদেশি চা অকশন কারীদেরও কর্মচারিদের থাকা খাওয়া সব সুযোগ বিরাজমান। বাংলাদেশের সকল মিডিয়া এগিয়ে আসুক। শ্রীমঙ্গল হচ্ছে পর্যটন শহর। এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসে। তাদের নিরপিত্তায় থাকে পর্যটন পুলিশ। এখানেই লাউয়াছড়া পাহাড় সবুজঘেরা চা বাগান। এখানেই রয়েছে দেশ বিদেশখ্যাত গ্র্যান্ডসুলতান,দোসাই রির্সোটসহ অসংখ্য রিসোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র। শহরের থানার মধ্যখানে থানা পুলিশ এবং পূর্ব দক্ষিণ পাশে বিজিবি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়াটার। এ শহরে বন্যা হয় না। সুতরাং ব্রোকার্স, ক্রেতা, বিক্রেতা, গোদামঘর কাঠামো যোগাযোগ বিক্রয় বিতরণ ও পরিবহন সবই নিরাপদ ও নিশ্চিত। এখানে চা নিলামে দেশ বিদেশীরা আসবে ঘুরবে থাকবে।
এবং এতে বিনিয়োগ বাড়বে। সরকার রাজস্ব পাবে। চা অর্থনীতি সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ২য় বৃহত্তম বৈদেশিক অর্থ উর্পাজন করবে চা। লোক মূখে স্বীকৃত চা শ্রমিক আ’লীগের ভোট ব্যাংক। এদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়ে উঠুক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত একটি বাড়ি একটি খামারের এবং চা শিল্প হয়ে উঁঠুক ডিজিটাল বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। চা শ্রমিক চা বাগান মালিক চা কর্মচারিসহ চা শিল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করুক দেশব্যাপি উন্নয়নের মহাসড়কে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে। আমাদের চা গ্রীণ লিফ ফ্লেভার্ড টি নিলামের মাধ্যমে বিশ^ জয় করুক। সিলেট থেকে এক গাড়ি চায়ের চালান চট্রগ্রামে পাঠাতে ভাড়া দিতে হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এর পর ট্যাক্স দিতে হয়। আর সড়কে যানজট তাকে চুরি ডাকতি চাঁদাবাজি প্রায়ই ঘটে। শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম হলে ভাড়া বাবদ ১৬-১৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। চা বাজারে সহজ লভ্য হবে ও গুন-মান বাড়বে।
এখানে (বিটিআরআই) এর সম্মানিত বিজ্ঞানীরা আছেন। টি বোর্ড অধিদপ্তর পিডিইউ এর জ্ঞানী নিরক্ষকবৃন্দ আছেন। চা নিলামের গুনগতমান পরীক্ষন, ক্রয় বিক্রয় সেবা পরিসেবা টি ট্রেষ্টিং, সেমিনার, মার্কেটিং লাইসেন্স আমদানি রপ্তনি বিষয়ে আলোকে তারা ট্রেনিং ও দিক নির্দেশনা দিবেন। চা শিল্পের উন্নয়নে চা নিলামের নিশ্চয়তায় সরকারী সাহায্য জরুরী। চট্রগ্রামে ব্রোকার্সগন ও শ্রীমঙ্গলে তাদের অভিজ্ঞতা ও ব্যবসা বান্দব ও পাঠনার সহযোগি বাচাই শ্রীমঙ্গল ৫০% এবং চট্রগ্রামে ৫০% ব্যবসা করতে পারেন।
চা শিল্পে মোট লিজকৃত ভূমি ১.১৫.৭০৮ হেক্টর। কার্যকর চা শ্রমিক ৪.১৫.৬২৭ জন। নির্ভশীল ৫.৮৫০০০জন। অর্থাৎ প্রায় ১০ লক্ষ লোক চা শিল্পে টিকে আছে। সুতরাং চা শিল্পের উন্নয়নে ৫.৮৫০০০ সরকারী পলিসি সার্পোট সাবসিডি, নিয়মনীতির রির্ফম, এক্ষুনি দরকার । চা নিলাম সকল বিষয়ে সাহায্য করবে। পাউন্ড, ডলার, রিয়ালসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। দেশের চা বাগান বাঁচবে, দেশে বাঁচবে। চা শিল্প উন্নত ও গর্বিত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। শ্রীমঙ্গলে আছে চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন। এদের দ্যূতিয়ালিতে সেতু বন্ধ ও সাহায্য সহযোগিতা চা নিলাম কেন্দ্র বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন বাস্তবায়ন শ্রমিক বাঁচার মত মজুরি নির্ধারন, শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী আবাসন এবশ্যই প্রয়োজন।বিশেষত্ব উল্লেখ্য বাংলাদেশ টি বোর্ডের সদর দপ্তরকে শ্রীমঙ্গল/মৌলভীবাজারে স্থানান্তর করলে চা শিল্প আরো অনেক উপকৃত হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন চা চট্রগ্রাম ৫০%- শ্রীমঙ্গলে ৫০% নিলাম টেস্ট বেসিসে নির্ধারীত করা হউক। এই বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী উদ্বোধনী সভায় ঘোষনা দিয়ে গেছেন চা নিলামে ব্রোকার্সদের অভিজ্ঞতায় গুণে মানে সমৃদ্ধ চা ২৫০-৩০০-৩৫০ টাকা বিক্রি করতে পারলে অনেক ধনি মানি গুনি জ্ঞানী ব্যাক্তিবর্গ কোম্পানি চা বাগান সৃজনে এগিয়ে আসবেন।
যেমন বাংলাদেশ তথা বিশ্ব বাজারে সর্বাধিক পরিচিত ও স্বীকৃত আল হারামাইন পারফিউম গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর অঙ্গ সংগঠন বিশ্বমানে নির্মিত সিলেটের সোবহানী ঘাটের আল হারামাইন প্রাইভেট হাসপাতাল এবং চা শিল্পের বিশেষ আর্কষণ মৌলভীবাজার শহর প্রান্তে হামিদিয়া টি এস্টেট আল হারামাইন গ্রুপ এর আরেকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এর সৌন্দর্য ও সফলতা উন্নত গুনমানের রোল মডেল চা বাগানটি দেখাবার জন্য সবাই কে সবিনয় আবেদন জানাচ্ছি।
আমরা চাই আল হারামাইনের মত আরো প্রতিষ্ঠান ও লোক চা শিল্পে আসুক। যেমন আসছে বসুন্ধরা, স্কয়ার, প্যারাগন, সিটিগ্রুপ, এইচআরসিসহ বহু জানা অজানা শিল্পপতি ধনিমানি বিত্তমান ও চিত্তবান ব্যাক্তিবর্গ। শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন সফল হউক। এই প্রত্যাশায়।- খোদা হাফেজ।
লেখক : মোঃ সিরাজুল ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার, হামিদিয়া টি এস্টেট (আল হারামাইন অঙ্গ সংগঠন) টি প্ল্যান্টার ও বিশেষজ্ঞ।
মন্তব্য করুন