মতামত করোনা ভাইরাস দেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ

March 26, 2020,

আব্দুল বাছিত বাচ্চু॥ বিদায়ী বছরের শেষের দিকে শুরু করে নতুন বছরের শুরুতে চীনের হুয়ানে শুরু হয় ব্যাপক সংক্রমণ।  করোনা নামক প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১শ ৮৯ টি দেশে।গোটা ইউরোপের নগরে নগরে করোনা ভাইরাস এখন এক আতংকের নাম।ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং বিশ্ব মোড়ল  যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক উন্নত দেশে লাশের মিছিল শুরু হয়ে গেছে। গত ৩ দিনে শুধু ইতালিতে মারা গেছে ১৮ শ’র ‘বেশি মানুষ। স্পেনে এখন ঘরে ঘরে  পাওয়া যাচ্ছে লাশ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ  পাচ্ছে না অনেক মানুষ। সেখানে তিনদিনে মারা গেছে ২ হাজার লোক ।এমনি পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডঐঙ)ইতোমধ্যে  এই ভাইরাসরের সংক্রমণ ও বিস্তারকে  বৈশ্বিক মহামারী  হিসেবে ঘোষণা করেছে।সাম্প্রতিক  আমাদের দেশে শুরু হয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। গত ১০ দিনে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫ জন। আর মোট আক্রান্ত ৩৯ জন।সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ জন। দেশের বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টার, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র এবং  হোম কোয়ারেন্টাইন মিলে পর্যবেক্ষনে রয়েছে অনেক লোক। মানে দেশে রোগটির দ্রুত সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটছে।এখন প্রশ্ন হলো এর মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কি???

যদিও সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে তবুও শুরুতে আমাদের একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। কারণ করনো এমন এক ভাইরাস  যেখানে এই ভাইরাসে  সংক্রমিত লোকের  মৃত্যুর হার খুব বেশি না হলেও এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বলা যায় এর বিস্তার  গানিতিক নয় জ্যামিতিক হারে। একজন লোক  এই ভাইরাসের বাহক হলে সে একদিনে কয়েক’শ মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। বিশেষ করে একটি ধর্মীয় বা  সামাজিক অনুষ্ঠান, একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একদিনে কয়েকশ মানুষকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলতে পারে করোনা রোগী ।যেমন রাজধানীর টোলার বাগে মৃত ব্যক্তির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার নার্স এমনকি  সেবায় নিয়োজিত মেয়ে, মেয়ের জামাই এমনকি কাজের মেয়ে পর্যন্ত এখন এই ভাইরাসে আক্রান্ত। হয়তো আরো অনেকজন সংক্রমিত হয়েছে যা পর্যায়ক্রমে জানা যাবে । আমরা চাইলে যেভাবে চীন ফেরত শিক্ষার্থীদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছিলাম সেভাবে গত দেড়মাসে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আমাদের প্রবাসীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারাইন্টানে রাখতে। অথচ  গত পয়েলা মার্চ থেকে ইতালিসহ সংক্রামিত এলাকার শত শত লোক দেশে ফিরেছে। আমরা তাদের হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছি। গণমাধ্যমে  প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এদের বেশির ভাগ গ্রামেগঞ্জে সকলের সাথে  মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

আমাদের দেশে মানুষ প্রায় ১৬ কোটি। তাদের জন্য শহরাঞ্চলে এখনো  নির্মল বায়ু ও সুন্দর পরিবেশ  নিশ্চিত করতে পারিনি । এছাড়া দেশের অর্ধেকের  বেশি লোক লাঞ্চ ফুসফুসসহ  বিভিন্ন ধরনের বক্ষ্যব্যাধি এমনকি ডায়বেটিস, ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপজনিত হার্টের সমস্যা, লিভার ও কিডনি জনিত রোগে ভোগছে। আবার খদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো যেনো বাঙালির অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।  অতএব নির্দিধায় বলা যায়  ইতলালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে এতো উন্নত পরিবেশে ভাইরাসটি মোকাবেলা য় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে এই পরিস্থিতিতে আমরা কতটুকু কি করতে পারবো  একমাত্র আল্লাহ ই জানেন।

এখন যে জিনিসটা করা যেতে পারে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু চাল ডালের ব্যবস্থা করে দিয়ে ১৪ দিনের জন্য  পুরো দেশ লক ডাউন করে দেওয়া।পাশাপাশি দেশের বড় শিল্পপতিদের সহযোগিতা নিয়ে প্রত্যেক জেলা স্টেডিয়ামে সিসিইউ ও আইসিইউ ফ্যাসিলিটিসহ এক হাজার বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল  স্থাপন করা,ডাক্তার নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রটেক্টিভ চিকিৎসা সরঞ্জাম  সরবরাহ,পথে পথে হাত দোয়ার জন্য ব্যবস্থা রাখা, ফ্রি হ্যন্ড সেনিটাইজার ও টিস্যু বিতরণ  করে মানুষকে সচেতন করে তুলা।

এখানে শুধু সরকারকে দোষারোপ করলে চলবে না যেহেতু এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা পদ্বতি কেউ জানে না অতএব পুরো জাতি সকল রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যদি প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা না নেই তবে বাঙালির কপালে অনেক বড় দুঃ খ আছে বলে আমি মনে করি।

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, গণমাধ্যম কর্মী ও চেয়ারম্যান, হাজীপুর ইউপি কুলাউড়া।

 

 

 

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com