অন্তেহরি গ্রামে ভূতের বাড়িতে অদ্ভুত কান্ড
মৌলভীবাজারের অন্তেহরি গ্রামের হরেন্দ্র দেবনাথের বাড়ি থেকে মণ-মণ ধান অদৃশ্য হয়ে যায়। কলসের পানি ঢেলে বিছানা ভিজিয়ে দেয়। খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। লোকভর্তি বাড়ি-এমন সময় ইট উড়ে এসে মহিলার মাথা ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু উপস্থিত লোকজন কিছুই দেখেন না চোখে। কবিরাজ, হুজুর সবাই ব্যর্থ। চার বছর ধরে এমন রহস্যময় কা- ঘটতে থাকায় এলাকার লোকজন এ বাড়ির নাম দিয়েছেন ভূতের বাড়ি। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার হাওর পাড়ের গ্রাম অন্তেহরি। এ গ্রামের বেশির ভাগ লোক কৃষিজীবী। গ্রামের হরেন্দ্র দেবনাথরা চার ভাই একই বাড়িতে বাস করেন। পরিবারের বর্তমান লোকসংখ্যা ১৯ জন। অন্তেহরি গ্রামে গেলে ভূতের বাড়ি বলতেই বোঝা গেল সবাই চিনেন হরেন্দ্রনাথ (৬০)-এর বাড়ি। গ্রামের সামনের ছোট নদী খেয়া নৌকায় পাড় হওয়ার সময় ৭-৮ জন মহিলার মুখে শোনা গেল এ বাড়ির আলোচনা। বাড়িতে একজন কবিরাজ ঝাড়ফোঁক দিচ্ছেন। তারা দেখতে যাচ্ছেন ওই বাড়ি। বাড়ির উঠানে জনা পঞ্চাশেক মানুষ বসা নারী-পুরুষ মিলে। তাদের সামনে একজন খালি গায়ে গলায় মালা পরা মধ্যবয়সী কবিরাজ। পাশে একটি কুপিবাতি। একটি নারিকেল। জানা গেল, কিছুক্ষণ পূর্বে কবিরাজ হরেন্দ্র সরকার তার কেরামতি দেখিয়েছেন। কবিরাজ একজন মহিলার সঙ্গে তার কেরামতির বিষয় নিয়ে মধুর তর্ক করছিলেন। কবিরাজ জানালেন, মহিলা নিজেও কিছু কেরামতি জানেন, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল। বাড়ির মালিক হরেন্দ্র দেবনাথ (৬০) জানালেন, চার বছর ধরে পর্যায়ক্রমে তার বাড়িতে অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটছে। জানালেন চার বছর আগে একরাতে তিনি খেতে বসেছেন- এমন সময় ঝুড়ঝুড়ে মাটির ঢিল তার ওপর এসে পড়ে। প্রথমে ভাবেন হয়তো কেউ দুষ্টুমি করছে ইঁদুরের মাটি দিয়ে। কিছুক্ষণ পর আবার একই ঘটনা ঘটলে খাবার ছেড়ে একটি দা (বঁটি) হাতে নিয়ে বের হন এবং বাড়ির চারদিকে খুঁজতে থাকেন কিন্তু কাউকে পান না। ঘরে ফিরে আসার পর হঠাৎ দেখতে পান এক কলসি পানি কে বা কারা তার বিছানার ওপর ফেলে দেয়। একে একে চার ভাইয়ের পরিবারে একই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। একদিন বিছানার ওপর বসে আছেন তিনি। হঠাৎ দেখতে পান খাটের এক পায়ের নিচের ইট নেই। কিছুক্ষণ পর ওপর থেকে তার কাছে ইট এসে পড়ে। এভাবে অলৌকিক ঘটনার সন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় কবিরাজ ও হুজুরের শরণাপন্ন হন তিনি। কবিরাজ ও হুজুর কিছু তাবিজ-কবজ দেন এবং ঝাড়ফোঁক দেয়ার পর দুতিন দিন শান্ত থাকলে আবারও শুরু হয়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। এ ধরনের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে যে যাই বলেন তাই করেন। এভাবে করতে করতে তারা এখন সর্বস্বান্ত। সম্প্রতি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে ২০ মণ ধান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার ঘরে এখন বিছানাপত্র কিছু নেই। সব ফেলে দিতে হয়েছে চার বছরে। ছেলেমেয়েরা ভয়ে বাড়ি থাকতে চায় না। গ্রামের লোকজনও জায়গা দিতে চায় না রাতে। তার ভাই কৃপেশ চন্দ্রনাথ (৫৫) বলেন, রাতেই শুধু যন্ত্রণা দেয় না, দিনেও লোকজনের সামনে খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে। ইট দিয়ে ঢিল মেরে বাড়ির দুই মহিলাকে গুরুতর জখম করেছে। এ যুগে এই কি সম্ভব-এমন প্রশ্ন করলে হরেন্দ্রর পাশের ঘরের পরেশ দেবনাথ (৪৫) বলেন, চোখের সামনে না ঘটলে বিশ্বাস করা কঠিন। তার কথা শুরুর দিকে এ পরিবারের সঙ্গে আমাদের কিছুটা পারিবারিক বিরোধ ছিল। অনেকে সন্দেহ করতো আমাদের। ৬ মাস আগে এক সন্ধ্যায় এ পরিবারের রাধা রানী ও মনিষা ইটের আঘাতে আহত হন। তখন আমার কন্যাসহ অন্যরা তাদের সেবা করতে এগিয়ে এলে তাদের কাছে গিয়ে আবারও ঢিল পড়ে ইটের। একই গ্রামের সুশীল দেবনাথ জানান, খড়ের গাদার আগুন আমিও দেখেছি। এটি কেউ লাগায়নি। যখন আমরা একদিকে নিভাতে শুরু করি, তখন অন্যদিকে ধরে যায়। এভাবে কয়েক জায়গায় অদৃশ্যভাবে আগুন লাগতে দেখেছি এবং পাশেই খড়ের গাদায় আগুন লাগার দাগ দেখালেন। কবিরাজের কাজ দেখতে আসা পাশের গ্রামের প্রবীণ আহল¬াদ সরকার (৯৬) বলেন, জিন-ভূতের কথা সব ধর্মে আছে। এখানেও ভূতের কারসাজি। কোন অপরাধে কোন অপদেবতা ভর করেছে তাদের ওপর। আর ঘটনার সত্যতা আছে। তিনিও কিছু সাক্ষ্য দিলেন। ঘরের বাইরের একটি খোলা স্থান থেকে বিশ মণ ধান উধাও হয়ে গেছে মঙ্গলবার রাতে। এটি চুরি হয়েছে। কারণ খোলা অবস্থায় ছিল। এ কথাও তাদের বোঝানো কঠিন হয়েছে। কথা বলে অনুমান হয়েছে, এরা সবাই মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা সব কিছু ঘটনায় ভূতের কা- বলে ভাবে। কবিরাজ হরেশ লাল সরকার জানালেন, আমি নিজেকে পেশাদার কবিরাজ ভাবি না। তাদের দুঃখের কথা শুনে এসেছি। আসন বসিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাদের তা বলেছি। বাকি ইশ্বরের ইচ্ছা। হরেন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী সুচিত্রা নাথ (৪৫) কাতর কণ্ঠে জানালেন, ভয়ে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। এ সময় হরেন্দ্র স্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় কি নাই।
মৌলভীবাজারের অন্তেহরি গ্রামের হরেন্দ্র দেবনাথের বাড়ি থেকে মণ-মণ ধান অদৃশ্য হয়ে যায়। কলসের পানি ঢেলে বিছানা ভিজিয়ে দেয়। খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। লোকভর্তি বাড়ি-এমন সময় ইট উড়ে এসে মহিলার মাথা ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু উপস্থিত লোকজন কিছুই দেখেন না চোখে। কবিরাজ, হুজুর সবাই ব্যর্থ। চার বছর ধরে এমন রহস্যময় কা- ঘটতে থাকায় এলাকার লোকজন এ বাড়ির নাম দিয়েছেন ভূতের বাড়ি। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার হাওর পাড়ের গ্রাম অন্তেহরি। এ গ্রামের বেশির ভাগ লোক কৃষিজীবী। গ্রামের হরেন্দ্র দেবনাথরা চার ভাই একই বাড়িতে বাস করেন। পরিবারের বর্তমান লোকসংখ্যা ১৯ জন। অন্তেহরি গ্রামে গেলে ভূতের বাড়ি বলতেই বোঝা গেল সবাই চিনেন হরেন্দ্রনাথ (৬০)-এর বাড়ি। গ্রামের সামনের ছোট নদী খেয়া নৌকায় পাড় হওয়ার সময় ৭-৮ জন মহিলার মুখে শোনা গেল এ বাড়ির আলোচনা। বাড়িতে একজন কবিরাজ ঝাড়ফোঁক দিচ্ছেন। তারা দেখতে যাচ্ছেন ওই বাড়ি। বাড়ির উঠানে জনা পঞ্চাশেক মানুষ বসা নারী-পুরুষ মিলে। তাদের সামনে একজন খালি গায়ে গলায় মালা পরা মধ্যবয়সী কবিরাজ। পাশে একটি কুপিবাতি। একটি নারিকেল। জানা গেল, কিছুক্ষণ পূর্বে কবিরাজ হরেন্দ্র সরকার তার কেরামতি দেখিয়েছেন। কবিরাজ একজন মহিলার সঙ্গে তার কেরামতির বিষয় নিয়ে মধুর তর্ক করছিলেন। কবিরাজ জানালেন, মহিলা নিজেও কিছু কেরামতি জানেন, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল। বাড়ির মালিক হরেন্দ্র দেবনাথ (৬০) জানালেন, চার বছর ধরে পর্যায়ক্রমে তার বাড়িতে অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটছে। জানালেন চার বছর আগে একরাতে তিনি খেতে বসেছেন- এমন সময় ঝুড়ঝুড়ে মাটির ঢিল তার ওপর এসে পড়ে। প্রথমে ভাবেন হয়তো কেউ দুষ্টুমি করছে ইঁদুরের মাটি দিয়ে। কিছুক্ষণ পর আবার একই ঘটনা ঘটলে খাবার ছেড়ে একটি দা (বঁটি) হাতে নিয়ে বের হন এবং বাড়ির চারদিকে খুঁজতে থাকেন কিন্তু কাউকে পান না। ঘরে ফিরে আসার পর হঠাৎ দেখতে পান এক কলসি পানি কে বা কারা তার বিছানার ওপর ফেলে দেয়। একে একে চার ভাইয়ের পরিবারে একই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। একদিন বিছানার ওপর বসে আছেন তিনি। হঠাৎ দেখতে পান খাটের এক পায়ের নিচের ইট নেই। কিছুক্ষণ পর ওপর থেকে তার কাছে ইট এসে পড়ে। এভাবে অলৌকিক ঘটনার সন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় কবিরাজ ও হুজুরের শরণাপন্ন হন তিনি। কবিরাজ ও হুজুর কিছু তাবিজ-কবজ দেন এবং ঝাড়ফোঁক দেয়ার পর দুতিন দিন শান্ত থাকলে আবারও শুরু হয়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। এ ধরনের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে যে যাই বলেন তাই করেন। এভাবে করতে করতে তারা এখন সর্বস্বান্ত। সম্প্রতি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে ২০ মণ ধান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার ঘরে এখন বিছানাপত্র কিছু নেই। সব ফেলে দিতে হয়েছে চার বছরে। ছেলেমেয়েরা ভয়ে বাড়ি থাকতে চায় না। গ্রামের লোকজনও জায়গা দিতে চায় না রাতে। তার ভাই কৃপেশ চন্দ্রনাথ (৫৫) বলেন, রাতেই শুধু যন্ত্রণা দেয় না, দিনেও লোকজনের সামনে খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে। ইট দিয়ে ঢিল মেরে বাড়ির দুই মহিলাকে গুরুতর জখম করেছে। এ যুগে এই কি সম্ভব-এমন প্রশ্ন করলে হরেন্দ্রর পাশের ঘরের পরেশ দেবনাথ (৪৫) বলেন, চোখের সামনে না ঘটলে বিশ্বাস করা কঠিন। তার কথা শুরুর দিকে এ পরিবারের সঙ্গে আমাদের কিছুটা পারিবারিক বিরোধ ছিল। অনেকে সন্দেহ করতো আমাদের। ৬ মাস আগে এক সন্ধ্যায় এ পরিবারের রাধা রানী ও মনিষা ইটের আঘাতে আহত হন। তখন আমার কন্যাসহ অন্যরা তাদের সেবা করতে এগিয়ে এলে তাদের কাছে গিয়ে আবারও ঢিল পড়ে ইটের। একই গ্রামের সুশীল দেবনাথ জানান, খড়ের গাদার আগুন আমিও দেখেছি। এটি কেউ লাগায়নি। যখন আমরা একদিকে নিভাতে শুরু করি, তখন অন্যদিকে ধরে যায়। এভাবে কয়েক জায়গায় অদৃশ্যভাবে আগুন লাগতে দেখেছি এবং পাশেই খড়ের গাদায় আগুন লাগার দাগ দেখালেন। কবিরাজের কাজ দেখতে আসা পাশের গ্রামের প্রবীণ আহল¬াদ সরকার (৯৬) বলেন, জিন-ভূতের কথা সব ধর্মে আছে। এখানেও ভূতের কারসাজি। কোন অপরাধে কোন অপদেবতা ভর করেছে তাদের ওপর। আর ঘটনার সত্যতা আছে। তিনিও কিছু সাক্ষ্য দিলেন। ঘরের বাইরের একটি খোলা স্থান থেকে বিশ মণ ধান উধাও হয়ে গেছে মঙ্গলবার রাতে। এটি চুরি হয়েছে। কারণ খোলা অবস্থায় ছিল। এ কথাও তাদের বোঝানো কঠিন হয়েছে। কথা বলে অনুমান হয়েছে, এরা সবাই মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা সব কিছু ঘটনায় ভূতের কা- বলে ভাবে। কবিরাজ হরেশ লাল সরকার জানালেন, আমি নিজেকে পেশাদার কবিরাজ ভাবি না। তাদের দুঃখের কথা শুনে এসেছি। আসন বসিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাদের তা বলেছি। বাকি ইশ্বরের ইচ্ছা। হরেন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী সুচিত্রা নাথ (৪৫) কাতর কণ্ঠে জানালেন, ভয়ে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। এ সময় হরেন্দ্র স্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় কি নাই। স্টাফ রিপোর্টার :
মন্তব্য করুন