আন্তর্জাতিক অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে ফিরে আসা দুই যুবকের দুর্বিসহ কাহিনী
বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ও বর্নি ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের যুবক আলতাফ হোসেন ও আবুল কাশেম। নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার জমি বিক্রি করে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবী। এক বছর চাকুরী করার পর আর্ন্তজাতিক মাফিয়া চক্রের এদেশিয় সদস্যরা তাদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগারের স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নে বিভোর যুবকরা তাদের সাথে ৫-৭ লাখ টাকার কন্টাক্টে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। দালালরা ইরান সীমান্তে আটক রেখে শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপন আদায় করত। মুক্তিপন প্রদানে ব্যর্থ অনেকের জীবন প্রদীপ নিভেছে আদম পাচারকারী চক্রের হাতে। সম্প্রতি ভাগ্য বিড়ম্বিত দুই য্বুক অলৌকিকভাবে মাফিয়া চক্রের আস্তানা থেকে পালিয়ে এসেছে। আল্লাহ আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন। নিজেদের বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে আমরা বেঁচে আছি। অপহরণের পর মাফিয়াদের কবল থেকে কিভাবে যে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছি সেটি মনে হলে এখনও গা শিউরে উঠে। কাশেম ও আলতাফের চোখে-মুখে এখনও লেপ্টে আছে মৃত্যূর আতঙ্ক। অপহরণ পরবর্তী দুর্বিসহ দিনগুলোর বর্ণনা দিতে আলতাফ ও কাশেম ভাষা হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে ধীরে ধীরে মুখ খুলেন। বেঁেচ থাকার প্রবল আর্তি নিয়ে রাতের অন্ধকারে কুল কিনারাহীন পথে পা বাড়াই। ইরানে বাংলাদেশী অপহরণকারী চক্রের হাতে অপহরণ পরবর্তী নির্যাতন এখনও চোঁখের সামনে ভাসে। ওরা আমাদের ৩ বার বিক্রি করেছে। দেশ থেকে টাকা না দিলে বলত কিডনী বিক্রি করে টাকা নিবে। চোঁখের সামনে অনেককে মরতে দেখেছি। দুবাই ভিত্তিক অপহরণকারী চক্রের মাধ্যমে ইরান-তুরস্ক সীমান্তের গোপন আস্তানায় আটকের পর ৩ বার বিক্রি হওয়ার পরও অলৌকিকভাবে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশী ২ যুবক বড়লেখার আলতাফ হোসেন ও কাশেম। তাদের সাথে নোয়াখালীর আব্দুর রহিম ও কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার আবুল কালামসহ আরও কয়েক জন ফিরে আসে। গত বছরের নভেম্বরে ইরানে বড়লেখারসহ ৪ বাংলাদেশী যুবক অপহরণের সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশ হলে সর্বত্র তুলপাড় শুরু হয়। অপহরণকারী চক্র মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের ছেলে সুমন মন্ডল, লক্ষ্মীপুরের হিরণকেও আটক করে তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে। এদের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ যুবক আটক হয়। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের দায়ের করা মামলায় অপহরণকারী চক্রের এদেশীয় সহযোগি বড়লেখার বর্নি ইউনিয়নের আলম উদ্দিন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত আলমের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ন অনেক তথ্য ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে। দেশীয় সহযোগী আলমকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আলম গ্রেফতার হওয়ার পর বড়লেখার আলতাব হোসেন ও কাসেমের পরিবার থানায় এসে আলমকে সনাক্ত করেন। আলম তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপনের টাকা চাইতে যায়। এরপর আলতাব হোসেন ও কাসেমের পরিবার জাকির, আলিম, আলম গংদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুটি মামলা করে (মামলা নং-১৭,১৮)। ফিরে আসা যুবকদের বর্ণনা: সম্প্রতি অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে পালিয়ে দেশে আসার পর বড়লেখার ২ যুবকের বাড়ীতে সরেজমিনে গেলে তাদের মুখ থেকে শোনা যায় অপহরণ পরবর্তী নির্যাতনের দুর্বিষহ কাহিনী ও অবিশ্বাস্য গল্প। অশ্রুসিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের কাছে আলতাফ হোসেন ও কাশেম জানায় গত বছরের রমজান মাসের প্রায় ১৫ দিন পূর্বে দুবাইয়ে অবস্থানরত দালাল আলিম আমাদের সব সময় ফোন দিয়ে বলত গ্রীসে যাওয়ার জন্য। তার অনেক চাপাচাপির পর মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে আমরা ৬০ বাংলাদেশী যুবক পা দেই। প্রত্যেকের সাথে ৫/৭ লক্ষ টাকার কন্টাক্ট হয়। আমরা ২ জনে ৭ লাখ টাকা দেই। রমজানের ৩ দিন পূর্বে স্পিট বোটে আমাদের উঠানো হয়। প্রচন্ড গরমে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পিপাসায় ময়লা বরফের পানি পান করেছি। স্পিট বোটে কেউ অসুস্থ হলে দালালরা অর্ধমৃত অবস্থায় থাকে সাগরে ফেলে দিত। এছাড়াও মরুভুমিতে অবস্থানের সময় কেউ অসুস্থ হলে তাকে অর্ধমৃত কবর দিত। ইরানে নিয়ে যাওয়ার পর ৭ দিন আমরা জঙ্গলে থাকি। এরপর ৬০ জনকে একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। প্রতিদিন এক বেলা খাবার দিত। ১০ জনের খাবার ৬০ জনকে দেয়া হত। গোসল করার ব্যবস্থা দিত নামে মাত্র। আটকের ২য় দিন পর আমাদের সবার বাড়ীর ফোন নাম্বার ও ঠিকানা নিয়ে বাড়ীতে ফোন করে টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা না দিলে আমাদেরকে হত্যা করে কিডনী বিক্রি করে টাকা নিবে বলে হুমকি দিত। তাদের দেশীয় দালালদের মাধ্যমে আমাদের সবার বাড়ীতে যোগাযোগ করে। ৩য় দিন আমাদেরকে দালাল এসে যারা টাকা দিতে পারবে তাদের আর যারা পারবে না তাদেরকে আলাদা করে। লোহার রড গরম করে ও ইস্ত্রি গরম করে দালালরা নির্যাতন করত। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলত। নির্যাতনের ভয়ে অনেকের বাড়ী থেকে দফায় দফায় টাকা দেয়া হত। তারপরও মুক্তি মিলেনি। নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন ভয়াবহ হতে শুরু করে। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এভাবে আমাদের এক দালাল থেকে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ আমরা ৯ জন হই। ৩ য় বার বিক্রির পর একদিন সকালে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। পালানোর পর আমরা ৬ জন ইরানি পুলিশের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেই। পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা আমাদের আদালতে নিয়ে গেলে আদালত আমাদের জেলে পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ ৫মাস (মিনাভ নামক জেলে) জেল খাটার পর জেল থেকে বের হওয়ার পর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জিয়া নামের একজনের সাথে দেখা হয় (ইরানে স্থায়ী বসবাসরত) তিনি আমাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। তিনি আমাদের প্রত্যেকের বাড়ীতে যোগাযোগ করে ৮০ হাজার টাকা করে নিয়ে আমাদের বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা করেন। এভাবেই বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আমরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখি। ফিরে আসি স্বজনদের মাঝে। টাকা লেনদেনের পরও মুক্তি মিলেনা : সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশী যুবকদের অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা লেনদেন হয়েছে। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবী থেকে লক্ষ্মীপুরের হিরণ ও মুন্সিগঞ্জের সুমন মন্ডলের মত বড়লেখার দুই যুবক আলতাব হোসেন ও কাসেমকে তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে নিয়ে আটক করে অপহরণকারীরা। এই অপহরণকারী চক্রের সাথে বড়লেখায় গ্রেফতার হওয়া আলমের ভাই ইরানে অবস্থানরত ইমরান ও দুবাইতে অবস্থানরত আলিম জড়িত। মুন্সিগঞ্জের সুমন মন্ডল ও লক্ষ্মীপুরের হিরণের পরিবার দফায় দফায় মুক্তিপণের টাকা একটি বেসরকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের বড়লেখা শাখায় জমা দিয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানদের মুক্তি মিলছে না বলে সুত্র জানায়। লক্ষ্মীপুরের হিরণের পরিবারকে সোনালী ব্যাংকের বড়লেখা শাখায় আলম উদ্দিন নামের একজনের একাউন্টে মুক্তিপণের টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় অপহরণকারীরা। কথামত টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের ছেলে সুমন মন্ডলকে আটক করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অপহরণকারীরা বড়লেখায় অবস্থানরত একটি বেসরকারী ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে। তারপরও তাদেরকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। বড়লেখার আলতাব ও কাশেমের পরিবারের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার এসআই কাওছারুজ্জামান জানান, ২টি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে।
বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ও বর্নি ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের যুবক আলতাফ হোসেন ও আবুল কাশেম। নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার জমি বিক্রি করে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবী। এক বছর চাকুরী করার পর আর্ন্তজাতিক মাফিয়া চক্রের এদেশিয় সদস্যরা তাদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগারের স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নে বিভোর যুবকরা তাদের সাথে ৫-৭ লাখ টাকার কন্টাক্টে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। দালালরা ইরান সীমান্তে আটক রেখে শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপন আদায় করত। মুক্তিপন প্রদানে ব্যর্থ অনেকের জীবন প্রদীপ নিভেছে আদম পাচারকারী চক্রের হাতে। সম্প্রতি ভাগ্য বিড়ম্বিত দুই য্বুক অলৌকিকভাবে মাফিয়া চক্রের আস্তানা থেকে পালিয়ে এসেছে। আল্লাহ আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন। নিজেদের বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে আমরা বেঁচে আছি। অপহরণের পর মাফিয়াদের কবল থেকে কিভাবে যে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছি সেটি মনে হলে এখনও গা শিউরে উঠে। কাশেম ও আলতাফের চোখে-মুখে এখনও লেপ্টে আছে মৃত্যূর আতঙ্ক। অপহরণ পরবর্তী দুর্বিসহ দিনগুলোর বর্ণনা দিতে আলতাফ ও কাশেম ভাষা হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে ধীরে ধীরে মুখ খুলেন। বেঁেচ থাকার প্রবল আর্তি নিয়ে রাতের অন্ধকারে কুল কিনারাহীন পথে পা বাড়াই। ইরানে বাংলাদেশী অপহরণকারী চক্রের হাতে অপহরণ পরবর্তী নির্যাতন এখনও চোঁখের সামনে ভাসে। ওরা আমাদের ৩ বার বিক্রি করেছে। দেশ থেকে টাকা না দিলে বলত কিডনী বিক্রি করে টাকা নিবে। চোঁখের সামনে অনেককে মরতে দেখেছি। দুবাই ভিত্তিক অপহরণকারী চক্রের মাধ্যমে ইরান-তুরস্ক সীমান্তের গোপন আস্তানায় আটকের পর ৩ বার বিক্রি হওয়ার পরও অলৌকিকভাবে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশী ২ যুবক বড়লেখার আলতাফ হোসেন ও কাশেম। তাদের সাথে নোয়াখালীর আব্দুর রহিম ও কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার আবুল কালামসহ আরও কয়েক জন ফিরে আসে। গত বছরের নভেম্বরে ইরানে বড়লেখারসহ ৪ বাংলাদেশী যুবক অপহরণের সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশ হলে সর্বত্র তুলপাড় শুরু হয়। অপহরণকারী চক্র মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের ছেলে সুমন মন্ডল, লক্ষ্মীপুরের হিরণকেও আটক করে তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে। এদের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ যুবক আটক হয়। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের দায়ের করা মামলায় অপহরণকারী চক্রের এদেশীয় সহযোগি বড়লেখার বর্নি ইউনিয়নের আলম উদ্দিন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত আলমের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ন অনেক তথ্য ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে। দেশীয় সহযোগী আলমকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আলম গ্রেফতার হওয়ার পর বড়লেখার আলতাব হোসেন ও কাসেমের পরিবার থানায় এসে আলমকে সনাক্ত করেন। আলম তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপনের টাকা চাইতে যায়। এরপর আলতাব হোসেন ও কাসেমের পরিবার জাকির, আলিম, আলম গংদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুটি মামলা করে (মামলা নং-১৭,১৮)। ফিরে আসা যুবকদের বর্ণনা: সম্প্রতি অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে পালিয়ে দেশে আসার পর বড়লেখার ২ যুবকের বাড়ীতে সরেজমিনে গেলে তাদের মুখ থেকে শোনা যায় অপহরণ পরবর্তী নির্যাতনের দুর্বিষহ কাহিনী ও অবিশ্বাস্য গল্প। অশ্রুসিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের কাছে আলতাফ হোসেন ও কাশেম জানায় গত বছরের রমজান মাসের প্রায় ১৫ দিন পূর্বে দুবাইয়ে অবস্থানরত দালাল আলিম আমাদের সব সময় ফোন দিয়ে বলত গ্রীসে যাওয়ার জন্য। তার অনেক চাপাচাপির পর মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে আমরা ৬০ বাংলাদেশী যুবক পা দেই। প্রত্যেকের সাথে ৫/৭ লক্ষ টাকার কন্টাক্ট হয়। আমরা ২ জনে ৭ লাখ টাকা দেই। রমজানের ৩ দিন পূর্বে স্পিট বোটে আমাদের উঠানো হয়। প্রচন্ড গরমে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পিপাসায় ময়লা বরফের পানি পান করেছি। স্পিট বোটে কেউ অসুস্থ হলে দালালরা অর্ধমৃত অবস্থায় থাকে সাগরে ফেলে দিত। এছাড়াও মরুভুমিতে অবস্থানের সময় কেউ অসুস্থ হলে তাকে অর্ধমৃত কবর দিত। ইরানে নিয়ে যাওয়ার পর ৭ দিন আমরা জঙ্গলে থাকি। এরপর ৬০ জনকে একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। প্রতিদিন এক বেলা খাবার দিত। ১০ জনের খাবার ৬০ জনকে দেয়া হত। গোসল করার ব্যবস্থা দিত নামে মাত্র। আটকের ২য় দিন পর আমাদের সবার বাড়ীর ফোন নাম্বার ও ঠিকানা নিয়ে বাড়ীতে ফোন করে টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা না দিলে আমাদেরকে হত্যা করে কিডনী বিক্রি করে টাকা নিবে বলে হুমকি দিত। তাদের দেশীয় দালালদের মাধ্যমে আমাদের সবার বাড়ীতে যোগাযোগ করে। ৩য় দিন আমাদেরকে দালাল এসে যারা টাকা দিতে পারবে তাদের আর যারা পারবে না তাদেরকে আলাদা করে। লোহার রড গরম করে ও ইস্ত্রি গরম করে দালালরা নির্যাতন করত। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলত। নির্যাতনের ভয়ে অনেকের বাড়ী থেকে দফায় দফায় টাকা দেয়া হত। তারপরও মুক্তি মিলেনি। নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন ভয়াবহ হতে শুরু করে। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এভাবে আমাদের এক দালাল থেকে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ আমরা ৯ জন হই। ৩ য় বার বিক্রির পর একদিন সকালে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। পালানোর পর আমরা ৬ জন ইরানি পুলিশের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেই। পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা আমাদের আদালতে নিয়ে গেলে আদালত আমাদের জেলে পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ ৫মাস (মিনাভ নামক জেলে) জেল খাটার পর জেল থেকে বের হওয়ার পর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জিয়া নামের একজনের সাথে দেখা হয় (ইরানে স্থায়ী বসবাসরত) তিনি আমাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। তিনি আমাদের প্রত্যেকের বাড়ীতে যোগাযোগ করে ৮০ হাজার টাকা করে নিয়ে আমাদের বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা করেন। এভাবেই বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আমরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখি। ফিরে আসি স্বজনদের মাঝে। টাকা লেনদেনের পরও মুক্তি মিলেনা : সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশী যুবকদের অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা লেনদেন হয়েছে। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবী থেকে লক্ষ্মীপুরের হিরণ ও মুন্সিগঞ্জের সুমন মন্ডলের মত বড়লেখার দুই যুবক আলতাব হোসেন ও কাসেমকে তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে নিয়ে আটক করে অপহরণকারীরা। এই অপহরণকারী চক্রের সাথে বড়লেখায় গ্রেফতার হওয়া আলমের ভাই ইরানে অবস্থানরত ইমরান ও দুবাইতে অবস্থানরত আলিম জড়িত। মুন্সিগঞ্জের সুমন মন্ডল ও লক্ষ্মীপুরের হিরণের পরিবার দফায় দফায় মুক্তিপণের টাকা একটি বেসরকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের বড়লেখা শাখায় জমা দিয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানদের মুক্তি মিলছে না বলে সুত্র জানায়। লক্ষ্মীপুরের হিরণের পরিবারকে সোনালী ব্যাংকের বড়লেখা শাখায় আলম উদ্দিন নামের একজনের একাউন্টে মুক্তিপণের টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় অপহরণকারীরা। কথামত টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জের মায়া রানী মন্ডলের ছেলে সুমন মন্ডলকে আটক করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অপহরণকারীরা বড়লেখায় অবস্থানরত একটি বেসরকারী ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে। তারপরও তাদেরকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। বড়লেখার আলতাব ও কাশেমের পরিবারের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার এসআই কাওছারুজ্জামান জানান, ২টি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে। আব্দুর রব॥
মন্তব্য করুন