বড়লেখায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে আলোঘর

July 18, 2013,

মৌলভীবাজারের বড়লেখার সাবাজপুর চা বাগানের (স্কয়ার গ্রুফের মালিকানাধীন) মুল ফটকের সামনেই চাকা থেমে গেল সিএনজি চালিত অটোরিকশার। আর এগুবে না। সামনে যেতে হলে হাঁটতে হবে। বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা পাহাড়-টিলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ পথে আসা যাওয়া করে বাতামোড়ল পানপুঞ্জির আদিবাসী খাসিয়া (খাসি) ও গারো লোকজন। এমনিতে পায়ে চলতে তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু মুশকিল কেউ অসুখ বিসুখে পড়লে। রাস্তাটি উন্মুক্ত বা স্থায়ী একজন পাহারাদার থাকলে সমস্যা হত নাÑ এমনটাই জানান আদিবাসীরা। তবে তারা এও জানালেন, এরকম রাস্তা বন্ধের সমস্যা শুধু এখানেই নয়, আরও অনেক পুঞ্জিও চা-বাগানের মধ্যে রয়েছে। যুগযুগ ধরে এরকম রাস্তা ও ফটক সম্পর্কে তিক্ত বাস্তবতার সাথে তারা খাফ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, এ যেন তাদের নিয়তি। তখন দুপুর। মাথার উপর সূর্য জ্বলছে। দুইপাশে সবুজ চায়ের গাছ। ছায়াবৃক্ষের ফাঁকফোকর গলে রোদ গায়ে লাগছে। এ প্রতিবেদকসহ চারজন নানারকম কথায় মজে পথ চলছি। আধো ছায়া, আধো রোদের ভেতর দিয়ে পথ চলতে ঘুরেফিরে ওঠে নানা সমস্যার কথা। কোনো না কোনোভাবে সমস্যাগুলো সামনে চলে আসে। একজন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক হওয়ার জ্বালা প্রকাশ করতে বলেই ফেললেন, এরসাথে অস্তিত্বের প্রশ্নটা যুক্ত বলে চাইলেই তার থেকে (পাহাড়) দূরে থাকা সম্ভব নয়। একসময় আমরা গান্ধাই পানপুঞ্জিতে পৌছি। খাড়া সিঁড়িপথ। একেতো হাঁটার ক্লান্তি, গরম তার উপর খাড়া উপরে ওঠা। হয়ত যে মানুষগুলো এখানে বাস করে, তারা দিনে অনেকবারই এমন পথ পার হয়। কিন্তু অনভ্যস্তদের ক্ষেত্রে তা ভীষন কষ্টের। আমরা পুঞ্জির একটি ঘরে বিশ্রাম নিয়ে আবার উঁচুনিচু পথে বেরিয়ে পড়ি। একসময় নির্জন টিলার উপর চোখে পড়ে টিনের পাকা দালান। এটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র নাম ‘আলোঘর’। বিভিন্ন টিলা থেকে শিশুরা ঘরটিতে এসে পড়ালেখা করে। গারো মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রেশিনা রিছিল বলে, ‘পড়তে ভালো লাগে।’ গারো ভাষায় ‘আংগা পারেইনা নাম নিককা।’ একইভাবে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া খাসি মেয়ে আলিশা নংক্রট বলল, ‘আমার বই পড়তে ভালো লাগে।’ যা খাসি ভাষায় ‘সাহ্ তুম্পাং ছু পড়ে কট।’ এখানে তাদের নিজেদের মত পড়ানোর পদ্ধতি আছে। যা শিশুদের আকর্ষণ করে। প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক দু’পর্বে শিক্ষা দেয়া হয়। দু’জন শিক্ষক এবং ৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল কমিটির সভাপতি রম পতাম বলেন, ‘এখানে স্কুল না থাকলে ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হত।’ কারিতাস আলোঘর প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষক শুসান্ত চিছাম বললেন, ‘এদের শেখানোতে খুব আনন্দ হয়। পড়ালেখার প্রতি এরা খুবই উৎসাহী।’ আলোঘর প্রকল্পের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পিউস নানোয়ার জানান, ২০১২ থেকে বড়লেখা তথা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পানপুঞ্জি, চা বাগান ও সীমান্তবর্তী গ্রাম এলাকায় এরকম ৫১টি স্কুলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই, সেখানেই তাদের বিদ্যালয়। আলোঘর প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে গুনগত শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ততক্ষণে বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা বেজেছে। পুতুলের মতো একদল শিশু তখন উল¬¬¬াস করে বেরিয়ে পড়ে টিলার ভাঁজে, যেন আলো কুড়িয়ে তারা ঘরে ফিরছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার সাবাজপুর চা বাগানের (স্কয়ার গ্রুফের মালিকানাধীন) মুল ফটকের সামনেই চাকা থেমে গেল সিএনজি চালিত অটোরিকশার। আর এগুবে না। সামনে যেতে হলে হাঁটতে হবে। বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা পাহাড়-টিলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ পথে আসা যাওয়া করে বাতামোড়ল পানপুঞ্জির আদিবাসী খাসিয়া (খাসি) ও গারো লোকজন। এমনিতে পায়ে চলতে তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু মুশকিল কেউ অসুখ বিসুখে পড়লে। রাস্তাটি উন্মুক্ত বা স্থায়ী একজন পাহারাদার থাকলে সমস্যা হত নাÑ এমনটাই জানান আদিবাসীরা। তবে তারা এও জানালেন, এরকম রাস্তা বন্ধের সমস্যা শুধু এখানেই নয়, আরও অনেক পুঞ্জিও চা-বাগানের মধ্যে রয়েছে। যুগযুগ ধরে এরকম রাস্তা ও ফটক সম্পর্কে তিক্ত বাস্তবতার সাথে তারা খাফ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, এ যেন তাদের নিয়তি। তখন দুপুর। মাথার উপর সূর্য জ্বলছে। দুইপাশে সবুজ চায়ের গাছ। ছায়াবৃক্ষের ফাঁকফোকর গলে রোদ গায়ে লাগছে। এ প্রতিবেদকসহ চারজন নানারকম কথায় মজে পথ চলছি। আধো ছায়া, আধো রোদের ভেতর দিয়ে পথ চলতে ঘুরেফিরে ওঠে নানা সমস্যার কথা। কোনো না কোনোভাবে সমস্যাগুলো সামনে চলে আসে। একজন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক হওয়ার জ্বালা প্রকাশ করতে বলেই ফেললেন, এরসাথে অস্তিত্বের প্রশ্নটা যুক্ত বলে চাইলেই তার থেকে (পাহাড়) দূরে থাকা সম্ভব নয়। একসময় আমরা গান্ধাই পানপুঞ্জিতে পৌছি। খাড়া সিঁড়িপথ। একেতো হাঁটার ক্লান্তি, গরম তার উপর খাড়া উপরে ওঠা। হয়ত যে মানুষগুলো এখানে বাস করে, তারা দিনে অনেকবারই এমন পথ পার হয়। কিন্তু অনভ্যস্তদের ক্ষেত্রে তা ভীষন কষ্টের। আমরা পুঞ্জির একটি ঘরে বিশ্রাম নিয়ে আবার উঁচুনিচু পথে বেরিয়ে পড়ি। একসময় নির্জন টিলার উপর চোখে পড়ে টিনের পাকা দালান। এটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র নাম ‘আলোঘর’। বিভিন্ন টিলা থেকে শিশুরা ঘরটিতে এসে পড়ালেখা করে। গারো মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রেশিনা রিছিল বলে, ‘পড়তে ভালো লাগে।’ গারো ভাষায় ‘আংগা পারেইনা নাম নিককা।’ একইভাবে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া খাসি মেয়ে আলিশা নংক্রট বলল, ‘আমার বই পড়তে ভালো লাগে।’ যা খাসি ভাষায় ‘সাহ্ তুম্পাং ছু পড়ে কট।’ এখানে তাদের নিজেদের মত পড়ানোর পদ্ধতি আছে। যা শিশুদের আকর্ষণ করে। প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক দু’পর্বে শিক্ষা দেয়া হয়। দু’জন শিক্ষক এবং ৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল কমিটির সভাপতি রম পতাম বলেন, ‘এখানে স্কুল না থাকলে ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হত।’ কারিতাস আলোঘর প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষক শুসান্ত চিছাম বললেন, ‘এদের শেখানোতে খুব আনন্দ হয়। পড়ালেখার প্রতি এরা খুবই উৎসাহী।’ আলোঘর প্রকল্পের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পিউস নানোয়ার জানান, ২০১২ থেকে বড়লেখা তথা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পানপুঞ্জি, চা বাগান ও সীমান্তবর্তী গ্রাম এলাকায় এরকম ৫১টি স্কুলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই, সেখানেই তাদের বিদ্যালয়। আলোঘর প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে গুনগত শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ততক্ষণে বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা বেজেছে। পুতুলের মতো একদল শিশু তখন উল¬¬¬াস করে বেরিয়ে পড়ে টিলার ভাঁজে, যেন আলো কুড়িয়ে তারা ঘরে ফিরছে। বড়লেখা প্রতিনিধি॥

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com